নিরাপদ কর্মপরিবেশ শ্রমিকদের মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে একটি। পেশাগত সুরক্ষা ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ কাজের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শ্রমিকরা যেখানে কাজ করবে তা সকল ধরণের বিপদ এবং ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকবে। অনুমান করা হয় যে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৬ কোটি মানুষ পেশাগত রোগে আক্রান্ত এবং প্রতি বছর দুই মিলিয়নেরও বেশি শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা যায় । এই ধরনের দুর্ঘটনা এবং অসুস্থতার কারণে শ্রমিক এবং তাদের পরিবার বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। আইএলও অনুমান করেছে যে পেশাগত রোগ এবং দুর্ঘটনার ফলে বিশ্বের বার্ষিক জিডিপির ৪ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়াও, নিয়োগকর্তারা দক্ষ কর্মী হারান, অসুস্থতথার কারণে অনুপস্থিতি এবং কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণে উৎপাদন ব্যহ্রত হয়।
উন্নয়নশীল
দেশ হিসেবে, বাংলাদেশের বাণিজ্য ও শিল্পে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হচ্ছে; এবং একই সাথে, শিল্পে
(পোশাক খাত, নির্মাণ, উৎপাদন এবং কৃষি সহ শিল্প ও কারখানাগুলিতেও) শ্রমিকের সংখ্যা
দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের মোট শ্রমশক্তির পরিমাণ প্রায় ৭১.৪৪ মিলিয়ন (৭ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার) জন।
বাংলাদেশের শ্রমশক্তির বৃহত্তম অংশ কৃষি (প্রায় ৪০.৬%) এবং সেবা (প্রায় ৩৯.৬%) খাতে
নিয়োজিত। শিল্প খাতে কর্মরতদের সংখ্যা প্রায় ২০.৪%। এর মধ্যে ৪৫ লক্ষ শ্রমিক বস্ত্র
ও পোশাক খাতে কাজ করে, ১৫ লক্ষ শ্রমিক কাজ করেন প্লাস্টিক রিসাইক্লিং খাতে। পরিসংখ্যানে
দেখা যায়, বিপুল সংখ্যক শ্রমিক পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। দুর্বল
পেশাগত সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির কারণে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক তাদের মূল্যবান জীবন
হারায় এবং আহত হয়। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ লেবার স্টাডিজ (বিআইএলএস) সংবাদপত্র ভিত্তিক
জরিপ অনুসারে, গত দশ বছরে বিভিন্ন পেশাগত দুর্ঘটনায় মোট ৫৯০৯ জন শ্রমিক মারা গেছেন
এবং ১৪৪১৩ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। ইপসা’র একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্লাস্টিক রিসাইক্লিং
শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকদের জীবন আয়ু ৪৫-৫৫ বছর, যেখানে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের গড় আয়ু
৭০-৭২ বছর।
পরিসংখ্যানে দেখা যায় কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলছে। গত একদশকে শিল্পে প্রায় ১০ টি বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে প্রায় অর্ধ হাজার খানেক মানুষের মৃত্যু হয় এবং সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শিল্পে সংঘটিত অধিকাংশ দুর্ঘটনা হলো অগ্নিকাণ্ড। ৩ জুন, ২০১০ তারিখে পুরান ঢাকার নিমতলী নবাব কাটরায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, ২৪ নভেম্বর, ২০১২ তারিখে ঢাকার আশুলিয়ায় নিশ্চিন্তপুরে তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড, ২৪ এপ্রিল, ২০১৩ তারিখে রানা প্লাজা ধস এবং ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ তারিখে পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রায় ৭০ জন প্রাণ হারায়, ২৮ মার্চ, ২০১৯ তারিখে ঢাকার বনানীর এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ড, ০১ মার্চ ২০২১ তারিখে ঢাকার বেইলি রোডে এক বহুতল ভবনে বিধ্বংসী অগ্নিকান্ডে কমপক্ষে ৪৩ জন নিহত হয়েছেন, ১৪ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে গার্মেন্টসের প্রিন্টিং কারখানা এবং কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়, ১৬ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) আল হামিদ টেক্সটাইল নামে একটি কারখানায় আগুন লেগেছে। নয়তলা ভবনটিতে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক কাজ করে, সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ ও কারখানার মালিকপক্ষ জানিয়েছে সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, ক্ষয়-ক্ষতি, আহত ও মৃত্যুর সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।সিইপিজেড কর্তৃপক্ষ ও কারখানার মালিকপক্ষ জানিয়েছে সবাইকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, ক্ষয়-ক্ষতি, আহত ও মৃত্যুর সংখ্যা এখনো জানা যায়নি।
আমাদের অজ্ঞতা এবং অসচেতনতাই মূলত এই ধরনের দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রাণহানির জন্য দায়ী। আমরা যদি একটু সচেতন থাকতাম তবে বেশিরভাগ দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। বাংলাদেশ পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষার মান উন্নত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তবে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও কর্মীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণের আইনী ভিত্তি সমূহঃ
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য একটি OSH নীতির প্রয়োজনীয়তা এবং তাৎপর্য স্বীকার করে, সরকার ২০১৩ সালে জাতীয় OSH নীতি গ্রহণ করে। এই প্রেক্ষাপটে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগ (DIFE) ২০১৬ সালে প্রথম জাতীয় OSH প্রোফাইল তৈরি করে এবং তারপর ২০১৯ সালে তা আপডেট করে।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা মর্মান্তিক ধসের পর, পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা (OSH) সম্পর্কিত বিষয়গুলি গুরুত্বদিয়ে সামনে আসে এবং শ্রম আইন (সংশোধন), ২০১৩ পাস হয়। সংশোধিত বিধানগুলোর মধ্যে রয়েছে: শিশুদের জন্য বিপজ্জনক কাজ সম্পর্কিত একটি নতুন ধারা যুক্ত করা (ধারা ৩৯); জরুরি প্রস্থান (ধারা ৬২); শ্রমিকদের জন্য গ্যাংওয়ে, সিঁড়ি ইত্যাদিতে প্রবেশাধিকার (ধারা ৭২); ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামের বাধ্যতামূলক ব্যবহার (ধারা ৭৮ক); ঘটনার ক্ষেত্রে/দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষের অবহিতকরণ বিজ্ঞপ্তি (ধারা ৮০); ৫০০০ এরও বেশি কর্মী নিযুক্ত কোম্পানিগুলিতে একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন বাধ্যবাধকতা (ধারা ৮৯); এবং একটি সুরক্ষা কমিটি গঠন সম্পর্কিত ধারা (ধারা ৯০ক) সংযুক্ত হয়।
বাংলাদেশের সংবিধানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, প্রত্যেক নাগরিক তার যোগ্যতা অনুসারে, কাজ অনুসারে, নীতির ভিত্তিতে তার কাজের জন্য উপযুক্ত পারিশ্রমিক ও নিরাপত্তা পাবে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০ বলা হয়েছে, সমাজতন্ত্র এবং শোষণ থেকে মুক্তি; অনুচ্ছেদ ১৪ বলা হয়েছে, কৃষক ও শ্রমিকদের মুক্তি; অনুচ্ছেদ ১৮ বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্য ও নৈতিকতা; অনুচ্ছেদ ১৯ বলা হয়েছে, সুযোগের সমতা এবং অনুচ্ছেদ ২০ বলা হয়েছে, কাজকে অধিকার, কর্তব্য এবং সম্মানের বিষয়; অনুচ্ছেদ ৩৪ বলা হয়েছে, জোরপূর্বক শ্রম নিষিদ্ধকরণ; অনুচ্ছেদ ৩৮ বলা হয়েছে, সংগঠনের স্বাধীনতা, অনুচ্ছেদ ৩৮ বলা হয়েছে, পেশার স্বাধীনতা। কিন্ত বাস্তবিক ও অন্যান্য কারণে একজন শ্রমিক তার সাংবিধানিক অধিকার হারাচ্ছে।
সকলের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী, নৈতিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে, ৫ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে জাতীয় পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নীতি প্রণয়ন ও গৃহীত হয়। নীতিটি বাংলাদেশের সকল কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রযোজ্য, যার মধ্যে রয়েছে শিল্প, কারখানা, উদ্যোগ, ব্যবসায়িক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। নীতিটির লক্ষ্য হল শ্রমিকের অপমৃত্যু, আঘাত এবং পেশা-সম্পর্কিত রোগের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা। নীতিটি বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক উভয় ক্ষেত্রেই কর্মরত সকল নারী ও পুরুষের জন্য প্রযোজ্য।
কর্মপরিবেশ ও পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ক অন্যান্য নীতিমালা ও আইন সমূহঃ
- অগ্নি প্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন (২০০৩)
- জাতীয় ভবন কোড (২০০৬)
- শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন (২০০৬)
- জাহাজ ভাঙা ও জাহাজ পুনর্ব্যবহার বিধিমালা (২০১১)
- জাতীয় শ্রম নীতি (২০১৩)
- জাতীয় শিশু শ্রম নির্মূল নীতি, (২০১০)
- গৃহকর্মী কল্যাণ নীতি (২০১৫)
নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও কর্মীর পেশাগত স্বাস্থ্য উন্নয়নে করনীয়ঃ
নিরপদ কর্মপরিবেশ, পেশাগত আঘাত এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন উৎপাদনকারী সংস্থা, নিয়োগকর্তা, কর্মচারী/শ্রমিক এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে যৌথভাবে কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকি সনাক্তকরণ এবং প্রশমনের জন্য একসাথে কাজ করা উচিত। এখানে কিছু কৌশল এবং ব্যবস্থা উল্লেখ করা হল যা নিরাপদ কর্মপরিবেশ, পেশাগত আঘাত এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে:
ঝুঁকি মূল্যায়ন এবং ঝুঁকি সনাক্তকরণ: কর্মক্ষেত্রে সম্ভাব্য বিপদ/ঝুঁকি চিহ্নিত করার জন্য নিয়মিত ঝুঁকি মূল্যায়ন পরিচালনা করতে হবে। চিহ্নিত বিপদগুলি নথিভুক্ত করে এবং তীব্রতা এবং ঘটনার সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে সেগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধান খোঁজা।
নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষা: কর্মীদের নিরাপত্তা পদ্ধতি, নিরাপদ কাজের অনুশীলন এবং সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান। নতুন কর্মীদের যথাযথ নিরাপত্তার দিকনির্দেশনা নিশ্চিতকরণ এবং নিয়মিত রিফ্রেশার প্রশিক্ষণ সেশন আয়োজন। পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা এবং সচেতনতার সংস্কৃতি প্রচার।
কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নীতিমালা প্রণয়ন এবং চর্চা: চিহ্নিত বিপদগুলি চিহ্নিত করে এবং পেশাগত স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা বিধিমালা তৈরী করতে হবে। বিধিমালা মেনে চলার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে এবং বাস্তবায়ন করুন।
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামাদির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ (PPE): কর্মক্ষেত্রে চিহ্নিত বিপদের উপর ভিত্তি করে কর্মীদের উপযুক্ত ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাদি (হেলমেট, গ্লাভস, সুরক্ষা চশমা, কান সুরক্ষা, উচ্চ-দৃশ্যমান পোশাক, শব্দ সুরক্ষা যন্ত্র এবং শ্বাসযন্ত্রের সুরক্ষা সরঞ্জামাদি ইত্যাদি) সরবরাহ করুন। PPE-এর সঠিক ব্যবহার, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংরক্ষণ সম্পর্কে কর্মীদের প্রশিক্ষণ আয়োজন। সুরক্ষা সরঞ্জামাদির প্রাপ্যতা এবং যথাযথ ফিটিং নিশ্চিত করতে হবে।
নিয়মিত কর্মক্ষেত্র পরিদর্শন এবং রক্ষণাবেক্ষণ: সম্ভাব্য বিপদ/ঝুঁকি বা ত্রুটি সনাক্ত করার জন্য সরঞ্জামাদি, যন্ত্রপাতি এবং কর্ম পরিবেশের নিয়মিত/বিধিমালা পরিদর্শন করুন। সমস্ত সরঞ্জামাদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে এবং ভাল কাজের অবস্থায় রয়েছে তা নিশ্চিত করার জন্য একটি মনিটরিং শিডিউল তৈরি করে, তারা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
কর্মদক্ষতা এবং ওয়ার্কস্টেশন নকশা: কর্মক্ষেত্রের ঝুঁকি কমাতে এবং পেশীবহুল ব্যাধির ঝুঁকি কমাতে ওয়ার্কস্টেশন ব্যবহার উপযোগী বা অপ্টিমাইজ করতে হবে। সঠিক আসন, কর্মদক্ষতা সরঞ্জাোদি এবং সামঞ্জস্যযোগ্য ওয়ার্কস্টেশন এবং কর্মীদের কাজের ভঙ্গির মতো বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে।
রিপোটিং চ্যানেল স্থাপন এবং তদন্ত: পেশাগত আঘাত, দুর্ঘটনা, রিপোটিং করার জন্য একটি প্রবেশগম্য রিপোটিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যেমন, হট লাইন, ই-মেইল, অভিযোগ বাক্স, ফোকাল পারসন নিয়োগ ইত্যাদি। কর্মীদের দ্রুত ঘটনা রিপোর্ট করতে উৎসাহিত করুন এবং মূল কারণগুলি সনাক্ত করার জন্য তদন্ত পরিচালনা করা নিশ্চিত করতে হবে। তদন্তে ঘটনার কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দায়ীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা ও ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নিরাপত্তা কমিটি গঠন এবং কর্মচারীদের সম্পৃক্ততা: নিরাপত্তা কমিটিতে কর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত ও উৎসাহিত করতে হবে। ঝুঁকি চিহ্নিত করতে, নিরাপত্তা উন্নতির পরামর্শ জানতে এবং নিরাপত্তা উদ্যোগে কর্মীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এটি কর্মীদের মধ্যে মালিকানা এবং দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তোলে।
ক্রমাগত উন্নতি: নিয়মিতভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নীতি এবং পদ্ধতির কার্যকারিতা পর্যালোচনা এবং মূল্যায়ন করতে হবে। উন্নতির ক্ষেত্রগুলি চিহ্নিত করে এবং সংশোধনমূলক পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়ন করতে হবে। কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে পারে এমন শিল্পের সেরা অনুশীলন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতি সম্পর্কে আপডেট থাকতে হবে।
শ্রমিকদের সচেতনতা এবং ক্ষমতায়ন: শ্রমিকদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ উত্থাপনের জন্য তাদের ক্ষমতায়ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন সরকারী সংস্থা এবং বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) শ্রমিকদের তাদের অধিকার সম্পর্কে সংবেদনশীল করা এবং পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা (OHS) সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা প্রয়োজন। শ্রসিকদের অধিকার রক্ষার জন্য নিরাপত্তা কমিটিতে শ্রমিকদের অংশগ্রহণ এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠনও গুরুত্বপূর্ণ।
বিপজ্জনক পদার্থ: শিল্পে বিপজ্জনক ও ঝুঁকিপূর্ণ পদার্থের পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনার দিকে মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। পেশাগত ঝুঁকি কমাতে রাসায়নিক এবং অন্যান্য বিপজ্জনক পদার্থের ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণ, সঠিক সংরক্ষণ এবং লেবেলিং অপরিহার্য।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বাংলাদেশে পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সংস্থা, উৎপাদনকারী সংস্থা, ব্র্যান্ড এবং অংশীদারদের ভূমিকা রয়েছে। শ্রমিকের সক্ষমতা বৃদ্ধি, সর্বোত্তম অনুশীলন ভাগ করে নেওয়া শিল্পের নিরাপত্তা মান বৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।
সম্বনীত উদ্যোগ প্রয়োজন: বাংলাদেশে কার্যকর পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা অনুশীলন নিশ্চিত করার জন্য সরকার, নিয়োগকর্তা, উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, শ্রমিক এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের নিরন্তর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। দেশে নিরাপদ কর্মক্ষেত্র তৈরির জন্য আইন প্রয়োগকারী ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ, শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সংস্কৃতি প্রচার এবং অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ গুরুত্বপূর্ণ।
মনে রাখতে হবে, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, পেশাগত আঘাত এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রতিষ্ঠানের সকল স্তরে সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক মন-মানসিকতা ও সংস্কৃতির প্রয়োজন। নিরাপত্তার সংস্কৃতি প্রচার, উপযুক্ত প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের মাধ্যমে, পরিবেশের উন্নয়ন, কর্মক্ষেত্রে নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ, আঘাত, দুর্ঘটনার ঝুঁকি, সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি ও মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। এবং ব্যবসায় উৎপাদন বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন