বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০২৩

লাইফ ইজ বিউটিফুল

তুমি হারবে, তারপরেও তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। 

আমরা প্রায়ই আমাদের সন্তানদের বলি " জিততে তোমাকে হবে, তোমাকে প্রথম হতে হবে, জিপিএ গোল্ডেন ফাইভ পেতে হবে, মেডিকেল চান্স পেতে হবে, বুয়েটে চান্স পেতে হবে, নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেতে হবে, ভালো চাকরি করতে হবে "। তাকে কখনও বলিনা, তুমি হারতেও পারো। জিতে যাওয়া মানেই জীবন না, হেরে যাওয়ার মধ্যেও থাকে বেঁচে থাকার আনন্দ। তুমিও তো রক্ত মাংসেরই মানুষ, তোমারও ক্লান্ত লাগবে। একটু বসো। সবসময়ই উঠে দাঁড়ানোর দরকার নাই। সবসময়ই দৌড়ানোর দরকার নাই। একটু বিশ্রাম করো। কথাটি কেউ বলি না। বলি না বলেই, অনেক ছেলেমেয়ে ঝুলে পড়ে। কেউ রিলেশনশিপের জন্য, কেউ টাকার জন্য, কেউ ক্যারিয়ারের জন্য, কেউ রেজাল্ট বা সিজিপি'র জন্য, কেউ বা একটুখানি ভালোবাসার জন্য।


হেলাল হাফিজ এক বুক কষ্ট নিয়ে লিখেছিলেন,

কেউ বলেনি,

ক্লান্ত পথিক,

দুপুর রোদে গাছের নিচে একটু বসে জিরিয়ে নিও...


মা বাবা, শিক্ষক, গার্জিয়ান, বন্ধু, সমাজ, পৃথিবী, আপনাদের সবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, সন্তানদের জিতে যাওয়ার মোটিভেশন দেন, সমস্যা নাই। কিন্তু হেরে যাওয়াদের কথাও একটু বলবেন, স্মরণ করিয়ে দিবেন, পৃথিবীতে সবাই জিততে আসে নাই। সবার জেতার দরকারও নাই। হেরে যাওয়াটা খুব  স্বাভাবিক। কিন্তু এই পৃথিবীতে সবাই বাঁচতে আসছে। সবার বাচাঁর অধিকার আছে,  জীবনটা একবার সেটাকে উপভোগ করতে হবে। Life is beautiful. এই পৃথিবীর আলো বাতাস, জল বা জোছনায় হেরে যাওয়া মানুষের যেমন অধিকার জিতে যাওয়া মানুষেরও অধিকার  আছে। সবার সমান অধিকার

সফলতার পরিমাপক কি ও এর নিয়ন্ত্রক কে!

সফলতা বা সাফল্য আসলে কি? ভাল রেজাল্ট, ভাল চাকুরী, অনেক ডিগ্রী, অনেক নামযশ, অনেক প্রতিপত্তি, ভাল পার্টনার, সুখের সংসার, কোনটা সাফল্যের পরিমাপক!

যিনি সফল হতে পারেনি তাহলে তার সফলতার নিয়ন্ত্রক কে! ব্যার্থ মানুষরা যেহেতেু তাদের ব্যার্থতা নিয়ে লেখেন না, তাই তাদের কথা কেউ জানতে পারি না। সবখানে কেবল সফলদের জয়জয়কার। কিন্ত আমার কাছে মনে হয় সফলতার সংজ্ঞাটি আপেক্ষিক, নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ব-নির্ধারিত। কারণ, আমি দেখছি,  সর্বোচ্চ সফল পেশায় থাকা মানুষটিকে দুঃখ করতে, অতি সুখী দম্পতিকে দেখেছি নিঃসন্তানের যন্ত্রণায় কাদঁতে, সফল যুগলকে দেখেছি ডিভোর্স হতে, উচ্চশিক্ষিত স্মার্ট তরুন ও সুন্দরী তরুনীকে দেখেছি পার্টনার না খুঁজে পেয়ে চিরকুমার বা চিরকুমারী থেকে যেতে, আবার ব্যাক বেঞ্চার মানুষটিকেও সাফল্যের চুড়ায় উঠতে দেখেছি, সাধারণ ছেলেটি বা মেয়েটির  অত্যন্ত ভালো পার্টনার ও সুখের জীবন পার করতে।

আসলে মানুষের জীবনে সুখ, সফলতা, ভাল পার্টনার, এসব কিছু  কিন্তু সৌন্দর্য্য, মেধা, ভাল ক্যারিয়ার এসবের উপর নির্ভর করেনা। একসময় সবচেয়ে পিছিয়ে যাওয়া মানুষটিও এগিয়ে যেতে পারে। আবার সবচেয়ে এগিয়ে থাকা মানুষটিও দিন শেষে ব্যর্থ হতে পারে।

ভালো বেতনের চাকুরী বা বিদেশে সেটেল হওয়া মানেই এইনা সে সবচেয়ে সফল ব্যাক্তি, সবচেয়ে সুন্দরী  বা সুদর্শন হওয়া মানেই এইনা যে সে ভাল পার্টনার পাবে। ফার্স্ট স্টুডেন্ট হওয়া মানে এইনা সে সবচেয়ে ভাল চাকরী পাবে।

জীবনের এই প্যারামিটারগুলোর উপর ভিত্তি করে আমরা সফলতা পরিমাপ করতে যাই। অথচ জানি না এই প্যারামিটারগুলো ফিক্সড হওয়া মানেই যে সে সফল হবে তার নিশ্চয়তা নেই। কারণ এর নিয়ন্ত্রন আমাদের হাতে নেই। কারণ তার সাথে জড়িত রয়েছে তাকদীর বা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য। ইসলামে তাকদীরের ওপর বিশ্বাস করা আল্লাহ তা'আলার রবুবিয়াত বা প্রভুত্বের ওপর বিশ্বাস করার অন্তর্ভুক্ত এবং তা ঈমানের ছয়টি রুকনের অন্যতম একটি রুকন।

মানুষের ভালো মন্দ যা কিছু হোক তা সবই আল্লাহর হুকুমে হবে। দুনিয়ায় ভালো কিছু পাওয়া গেলে আত্মহারা বা অহংকারী হয়ে যাওয়া যাবে না আবার কোন বিপদ আপদে পড়লে হতাশ হওয়া যাবে না। বিশ্বাস করতে হবে আল্লাহর ইচ্ছা ও জ্ঞান অনুযায়ী সে ফল পেয়েছে, নিশ্চয় এর মধ্যে কোনো কল্যাণ নিহিত রয়েছে। কাজেই ব্যার্থ হলে হতাশ না হয়ে নিজের কর্মের ভুলগুলো সারিয়ে নতুন করে তৈরি হতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে, ফলাফলের দায়িত্ব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিতে হবে। কারন আল্লাহপাকই সর্বোত্তম পরিকল্পনাকারী।