বৃহস্পতিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২০

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি নির্ণয় করবে COVIS

ওর্য়াকিং হোমের (সরকারি বিশেষ ছুটি) আজ ২১ তম দিন পার হল। এই দিনগুলোতে আমাদের অনেকেরই বেশ আচরণগত পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে আমাদের পরিবারে, যেমন, আমার ছোট মেয়ে (ফারিসা) যার বয়স দুই বছরের কম, তার হাত ধোয়ার অভ্যাস, হাছিঁ কাশির শিষ্টাচার এর চর্চা, আমার ঘন ঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সপ্তাহের বার ভুলে যাওয়া, সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত খবরে আতংকিত না হওয়া, বইপড়া, নিয়মিত নামায পড়া, কোরআন তেলোয়াত করা, আত্মীয়-স্বজনদের ফোন করা, স্বল্প পরিসরে পারিবারিক কাজে সহায়তা করা ও আমার কন্যাদের সময় দেওয়া। সমাজের মানুষগুলোর মধ্যে এসেছে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন যেমন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশনা মেনে চলা, সামাজিক ও ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, আত্ম-সমালোচনা করা ইত্যাদি।

বিশেষ করে, এই কঠিন সময়ে, যাদের অবদান ও ত্যাগ আমাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করছে, যেমন আমাদের চিকিৎসক, নার্স , স্বাস্থ্যকর্মী, নিরাপত্তা ও সরকারী নির্দেশ বাস্তবায়নে নিয়োজিত আামাদের আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও মাঠ প্রশাসন, সাংবাদিক, ইন্টারনেট সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, ঔষধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবক ও জরুরী প্রয়োজনে পরিচালিত বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ। তাদের এই ত্যাগের জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তাদের এই ত্যাগ দেখে আমার নিজেরও খুব ইচ্ছা করে, আমি যদি এই সময় কিছু করতে পারতাম। তাহলে নিজেকে হালকা অনুভব করতাম। তাই চেষ্টা করলাম আমি আমার জ্ঞান ও ইচ্ছা দিয়ে কি করা যায়, কিভাবে এই ক্রান্তি লগ্নে নিজেকে সামিল করা যায়। সেই তারনা ও দায়িত্ববোধ থেকে ভাবলাম আমি যদি একটি বিশেষ ওয়েভ এপ্লিকেশন বানাতে পারতাম যার মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসে এই প্রাণঘাতি করোনাভাইারাসের ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয় করতে পারে। তাহলে মানুষের মধ্যে যে আতংক বিরাজ করছে তা কিছুটা হলেও কমবে ও মানুষ সহজেই প্রয়োজনীয় তথ্য ও দিক-নির্দেশনা পাবে।

ইচ্ছা অনুযায়ী কাজে শুরু করলাম, দিনের বেলায় অফিসের কাজের ফাঁকে ফাঁকে, রাতের বেলায় কম ঘুমিয়ে এই বিষয়ে পড়াশুনা শুরু করলাম, গুগল সার্চ, ইউটিউব দেখা, ক্লাসের লেকচার দেখা, পরিচিত আইটি প্রফেশনাল বন্ধুদের ফোন দেওয়া এসব করে গত ২৮ মার্চ ২০২০ তারিখে পাইথনে একটি প্রোগ্রামিং লিখলাম। এই কোডটি ভালোই কাজ করছিল। পরবর্তীতে ২৯ মার্চ দেখলাম সরকারের পক্ষ থেকে অনলাইনে করোনাভাইারাসের ঝুঁকির মাত্রা নির্ণয়ের একটি এপ্লিকেশন প্রকাশ হয়, যা কিনা আমার আইডিয়ার সাথে অনেকটা মিল। আমি সরকারকে ধন্যবাদ জানালাম এবং বললাম এটি দরকার ছিল। পরে আমি আমার প্রেরণা থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলি, মনে মনে ভাবলাম নতুন একটা কিছু করব, কিন্তু আর হল না। এইটা নিয়ে ফেসবুকে একটা পোস্ট ও দিলাম যে, আমার নতুন কিছু করার সুযোগটা মিছ হয়ে গেল। আমার পরিবার, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শুভাকাঙ্খী ও বন্ধুরা বলল সরকার এপ্লিকেশন বানিয়েছে, তাতে কি হয়েছে আমি যেন আমার চেষ্টা চালিয়ে যাই।

কিছুদিন পর, আমার বেগম ও বড় মেয়ে (ফাইযা) ইচ্ছা ও অনুপ্রেরণায় অনুপ্রেরিত হয়ে করোনাভাইারাসের ঝুঁকির নির্ণয়ের এপ্লিকেশনটি নিয়ে আবার কাজ শুরু করলাম। পাইথনে গ্রাফিকেল ইউজার এন্টারপ্রাইজে আমার নলেজ একেবারে কম বিধায়, বিকল্প চিন্তা শুরু করলাম। কিভাবে দ্রুত এই এপ্লিকেশনটি শেষ করা যায়। পরবর্তীতে, ফ্রন্ট এন্ডেড এনভায়রনমেন্ট এর কথা চিন্তা করলাম এই বিষয়ে আমার অল্প কিছু ধারনা রয়েছে, বাকিটা গুগল দেখে করে নেওয়া যাবে। যে কথা সেই কাজ, এইচটিএমএলে কোড লিখলাম, সিএসএসে ডিজাইন করলাম আর জাভাস্ক্রিপট দিয়ে যোগ বিয়োগ ও লজিকের কাজগুলো করলাম। এভাবে আমার বেসিক কাজগুলো শেষ করলাম। এবং নিজে একটি ডোমেইন কিনে www.tec4society.com  সাইটে হোস্টিং করলাম। দেখলাম যে, এই সার্ভিসটি কাজ করছে। আমার এই সার্ভিসটির নাম দিলাম COVIS (COVID-19 Vulnerability Indexing System).  এই সার্ভিসটিতে দশটি প্রশ্ন রয়েছে এবং প্রত্যেকটি প্রশ্নের বিপরীতে চারটি অপশন রয়েছে। ইউজার তার ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য দিয়ে দশটি প্রশ্নের উত্তর দিবেন। পরবর্তীতে ব্যবহারকারী নিজেই বুঝবেন করোনাভাইরাসে উনি কতটুকু ঝুঁকিপূর্ণ। সব ব্যবহারকারীর কথা চিন্তা করে এই সার্ভিসটি বাংলায় (ইউনিকোডে) করা হয়েছে। এই সার্ভিসটিতে করোনাভাইরাস বিস্তার ও প্রতিরোধের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে যা  করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সহায়ক। পাশাপাশি এই এপ্লিকেশনে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হটলাইন নম্বর রয়েছে যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করতে পারবে।

আইসিটি বিষেজ্ঞদের কাছে হয়ত এই সার্ভিসটি খুবই ছেলে খেলনার মত মনে হবে, অপরিপক্ব সার্ভিস মনে হবে, আসলেই তাই। তবে আমার কাছে এর কদর অনেক বেশি, জাতির এই দুর্যোগ সময়ে যদি আমার এই সার্ভিসটি কারও একটু খানি আতংক কমিয়ে দেয় বা কারও যদি একটু তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করে তবেই আমি স্বার্থক। এই সার্ভিসটি কে আরও আপডেট, ব্যবহার উপযোগী ও বহুমুখী উদ্দেশ্যে ব্যবহারে আপনাদের সহযোগীতা চাই।

সর্বোপরি আমার এই এপ্লিকেশনটি উৎসর্গ করতে চাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান কে। বঙ্গবন্ধু’র জন্ম শতবার্ষিকিতে এটা আমার দেওয়া ক্ষুদ্র উপহার।