শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৯

নগরীকরণ, নাগরিক সেবা ও প্রতিবন্ধি বান্ধব শহর

বিশ্ব ব্যাংকের মতে গত এক দশকে বাংলাদেশে নগরীকরণের হার ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম। বাংলাদেশে জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এখন শহরে বসবাস করছে। নগরীকরণের হার এভাবে চলমান থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের মোট জনসংখ্যার  অর্ধেকের ও বেশী নগরে বসবাস করবে। ধারনা করা হয় বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ শুধুমাত্র ঢাকা শহরেই বসবাস করে। এবং ঢাকার পরেই রয়েছে চট্টগ্রামের অবস্থান। নগর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব হল নগরগুলোতে অবস্থানরত নাগরিকদের নাগরিক সেবা প্রদান। বিশাল এই জনগোষ্ঠিকে  যথাযথ নাগরিক সেবা প্রদান করা নগর কর্তৃপক্ষের জন্য একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ। তারপরও সীমিত সম্পদ ও অপ্রতুল বাজেটের মধ্যে সরকার, নগর কর্তৃপক্ষ ও বেসরকারি সংস্থা-সমূহ যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাতে সমস্ত নাগরিককে নগরের সেবার আওতায় নিয়ে আসা। এখন দরকার হল নাগরিকদের সহযোগিতা, উন্নয়ন কাজে সমন্বয়, জবাবদিহিতা, স্বচ্ছতা ও দেশপ্রেম। তাহলেই আমরা পারব সীমিত সম্পদের মধ্যেও সবার জন্য নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ প্রতিবন্ধি এবং তার মধ্যে প্রায় ৪ মিলিয়ন দৃষ্টি প্রতিবন্ধি। তাদের বিশাল একটা অংশ শহরে বসবাস করছে। 

আমরা কি পেরেছি এই বিশেষ জনগোষ্ঠিকে সঠিক নাগরিক সেবা পৌছে দিতে? আমার মতে, আমরা এখনও যথাযথ পারিনি। এখনও দেখি সিটি বাসগুলোতে প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের জন্য সিট খালি থাকেনা। যদিও অনেকক্ষেত্রে বাসে সিট নির্ধারিত লেখা থাকে, আমরা সেটা আমলে নেইনা কারণ তা মনিটরিং কোন ব্যবস্থা নেই। একই ভাবে আমাদের বাস স্ট্যান্ডগুলোও প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের জন্য কোন বিশেষ ব্যবস্থা নেই। সেজন্য আমাদের গণপরিবহনগুলো প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের ব্যবহারে উপযোগী নয়। একইভাবে আমাদের শহরের ফুটপাতগুলো তাদের চলাচলের জন্য উপযোগী নয়। অন্ধ নারীদের অবস্থা আরও ভয়াবহ। শহরের রাস্তায় তাদের অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে যৌন হয়রানির ঘটনাও ঘটছে। আমাদের ফুটপাতগুলো বেদখল, যেখানে সেখানে বৈদ্যুতিক খুটি, খোলা ম্যানহল এই শহরে প্রতিবন্ধিদের চলাচলকে বিপদজনক করে তুলছে। একইভাবে, নগরের পথচারীদের সুবির্ধাথে চালু হয়েছে পাবলিক টয়লেট। সেই পাবলিক টয়লেটেও প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের জন্য বিশেষ কোন ব্যবস্থা নেই। আর ব্যবস্থা থাকলেও তা অকার্যকর। তাহলে প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের জন্য এই শহরগুলো কতটুকু নিরাপদ। আশার কথা, সম্প্রতি আমার নজরে পরে, প্রতিবন্ধি ব্যক্তিদের চলাচলের সুবির্ধাথে ঢাকার বেশ কয়েকটি এলাকার ফুটপাতে ব্লক টাইলস বসানো হয়েছে। 
এই টাইলসগুলোর একপাশে হলুদ টাইলস। এবং এই হলুদ টাইলসগুলোতে সোজা সোজা স্ট্রেপস আছে যাতে করে, দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ব্যক্তিরা তাদের গন্ত্যবে যেতে পারে। ফুটপাতের ঢাল বরাবর বিশেষ চক্রাকার ডিজাইনের টাইলস বসানো হয়েছে, যাতে করে ফুটপাতের ঢাল সমূহ দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ব্যক্তিরা সহজেই বুঝতে পারে। 

ঢাকার পরে, আমার দেখা চট্টগ্রাম শহরেও বেশ কয়েকটি এলাকার ফুটপাতে ব্লক টাইলস বসানো হয়েছে। তবে সেখানে মাঝখানের যে, হলুদ রংয়ের সোজা সোজা স্ট্রেপস আছে সে টাইলস ব্যবহ্রত হচ্ছে না। এইক্ষেত্রে যদি আমরা একটু সমন্বয় করি ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ব্যক্তি চলাচল উপযোগী টাইলস ব্যবহার করি তাহলে আমাদের ফুটপাথগুলো অন্তত প্রতিবন্ধিদের চলাচল উপযোগী ও নিরাপদ হবে। তাই আমি অনুরোধ করব নগরীর ফুটপাতে যাতে ব্লক টাইলস বসানো হয়। গণ-পরিবহনে, (সিটি বাস) বাসে যে সংরক্ষিত নয়টা সিট রাখা প্রতিবন্ধি, শিশু ও নারীদের জন্য। সে ব্যাপারে জনগণকে সচেতন করতে হবে, প্রয়োজনে মনিটরিং করতে হবে। বাস স্ট্যান্ডগুলোতে প্রতিবন্ধিদের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। সর্বোপরি প্রতিবন্ধিদের অধিকার ও সুরক্ষা আইনের বাস্তবায়ন, মনিটরিং ও সবার সমন্বয়সাধনই নিশ্চিত করতে পারে, প্রতিবন্ধি বান্ধব শহর। যা, আমাদের সহযোগিতা করবে ২০৪০ এর মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়তে, পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার, লক্ষ ১১ টেকসই নগর ও কমিউনিটি গঠনে ।