বুধবার, ৬ মে, ২০২০

বাংলাদেশের শ্রম অভিবাসন ও অর্থনীতির উপর করোনাভাইরাসের প্রভাব এবং আমাদের করনীয়

মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ ও সংক্রমণের মাত্রা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে সমগ্র বিশ্বব্যাপী লকডাউন অবস্থা বিরাজমান। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে বিশ্বের প্রায় ৮০’র অধিক দেশে এই  লকডাউন অবস্থা বিরাজমান। লকডাউনের ফলে এসব দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হয়ে আছে। দেশে দেশে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড স্থবির হওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে কম-আয়ের জনগোষ্ঠি, আদিবাসি, প্রতিবন্ধি ব্যক্তি, অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তি, দিনে এনে দিনে খাওয়া জনগোষ্ঠি, নারী কেন্দ্রিক পরিবার, অভিবাসী ও তার পরিবার। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) পূর্বাভাস দিয়েছেন করোনা’র ফলে সারা বিশ্বে প্রায় ১৯ কোটি মানুষ চাকরি হারাতে যাচ্ছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো চাকরি হারাতে যাচ্ছে সাড়ে ১২ কোটি মানুষ। বলা হচ্ছে বিশ্বের মোট কর্মশক্তির প্রতি পাঁচজনের মধ্যে চারজনের পেশা কোন না কোনভাবে কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বাংলাদেশের শ্রম বাজার বলে পরিচিত ইউরোপে চাকুরি হারাবে ১ কোটি ২০ লাখ, মধ্য প্রাচ্য ও আরব দেশে চাকুরি হারাবে প্রায় ৫০ লাখ কর্মী। এসব দেশে চাকরিচ্যুতির মূল শিকার হবেন অভিবাসি শ্রমিকরা। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন  বিদেশ কর্মরত স্বল্প দক্ষের শ্রমিক, ভাসমান অভিবাসী শ্রমিক ও যাদের কোনো স্থায়ী চাকুরী নেই । লকডাউনের ফলে এখন তাদের কোনো কাজ নেই, আয় নেই, অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে ও লোক ছাটাই শুরু করেছে। যার ফলে অনেকে বাধ্য হচ্ছেন বা বাধ্য করছেন দেশে ফেরত আসতে।

আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা আইওএম এর মতে গত একমাসে  (ফেব্রুয়ারী-মার্চ’২০২০) প্রাই ৪ লক্ষের অধিক অভিবাসী বাংলাদেশে ফেরত এসেছেন। অধিকাংশই ফেরত এসেছেন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে। স্থল বন্দর দিয়ে দেশে ফিরেছেন প্রায় ১০,০০০ বাংলাদেশী অভিবাসী। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে ও দেশের বাইরে মারা গেছেন প্রায় পাচঁঁশত অভিবাসী। যেসব অভিবাসীরা বিদেশে রয়ে গেছেন লকডাউন বা অবরোধের ফলে তারা বেকারত্ব, ক্ষুধা, আবাসন সংকট এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিতে ভুগছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব অভিবাসীরা দেশে ফেরত এসেছেন তাদের অধিকাংশই কম আয়ের, সাধারণত গন্তব্য দেশে তারা সেলসম্যান, নির্মাণ শ্রমিক ও খাবার হোটেল/রেষ্টুরেন্টে খন্ড কালীন কাজ করতেন। এই ফেরত অভিবাসীর অধিকাংশই দেনাগ্রস্থ। ফেরত অভিবাসীর অধিকাংশই তাদের পরিবারের একমাত্র উর্পাজনশীল এবং তাদের সম্পত্তি বলতে শুধুই তাদের বসতভিটা ও সামান্য কিছু আবাদি জমি। অনেকে আবার সেটাকে বন্ধক রেখে বিদেশে গিয়েছিলেন। যেসব অভিবাসী আবার ফিরে যাবার ইচ্ছা ছিল, দীর্ঘদিন লকডাউনের ফলে তাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। ফেরত অভিবাসীর বিশাল অংশ তাদের গন্তব্য দেশে নিয়োগকর্তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করতে পারেছন না, যোগাযোগ করতে পারেছন না কোনো সরকারি অফিস (ডেম্যু) এবং রিক্রুটিং এজেন্সির সাথে। যার ফলে তারা পড়েছে চরম অনিশ্চয়তা ও অস্থিরতার মধ্যে। লকডাউনের কারনে দীর্ঘদিন দেশে থাকার কারণে অভিবাসীরা দেশে ফেরার সময় সংঙ্গে যে পরিমাণ টাকা নিয়ে এসেছিলেন তাও  শেষ হয়ে এসেছে। অনেক অভিবাসী আত্মীয় স্বজন থেকে আবার দেনা করা শুরু করেছেন। অবরোধ চলমান থাকার কারণে তারা স্থানীয় পর্যায়ে কোন কাজও পাচ্ছেন না। আর যেসব অভিবাসী বিদেশে রয়ে গেছেন তারা পড়েছেন চরম আর্থিক সংকটে। এই সময় বিদেশে কোন কাজ না থাকার কারনে, অনেকে বেতন পাচ্ছেন না বা অনিয়মিতভাবে বেতন পাচ্ছে। যারা ফলে দেশে অবস্থানরত সেই সমস্ত অভিবাসীর পরিবার পড়েছে আর্থিক সংকট ও অনিশ্চয়তার মধ্যে । এই সময় দেশে ফেরত আসা অভিবাসীরা সামাজিক বৈষম্যের ও শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে,  অনেকক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের বিস্তার এর জন্য শুধুমাত্র অভিবাসীদের দায়ী করা হয়েছে, তাদের বাড়িতে লাল পতাকা ঝুলিয়ে সামাজিকভাবে আলাদা করে দেবার অভিযোগ রয়েছে। অনেক অভিবাসী সংঙ্গরোধ না মানার অভিযোগ ও উঠেছে।

অথচ অভিবাসীদের ঘামের টাকা সচল রাখছে দেশের অর্থনীতির চাঁকা। গত বছরও এই অভিবাসাী হিরো’রা ১৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠান, যা দেশের অর্থনীতিকে চাঁকাকে সচল রেখেছে। প্রতিবছর দেশের কর্ম-সংস্থানের বিশাল সংস্থান যোগাচ্ছে এই খাতটি। বাংলাদেশ থেকে প্রতিমাসে গড়ে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার কর্মী বিদেশ যেতেন, গত মাসে তার সংখ্যা একবারে শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। অভিবাসাীদের পাঠানো অর্থ দিয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে টিকে আছে প্রায়ই চার কোটি পরিবার। অর্থনীতিকে সচল রাখার জন্য দরকার এই রেমিটেন্সের চলমান প্রবাহ। করোনা পরবর্তীতে যে অর্থনৈতিক মন্দার কথা বলা হচ্ছে সেই সময় দেশে ও দেশের বাইরে অনেকে চাকুরী হারাবে। এই অবস্থায় টিকে থাকা ও উন্নয়ন চলমান রাখার জন্য চাই স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা। করোনা উত্তর বিশ্বজুড়ে যে কর্ম-সংস্থান এর সুযোগ তৈরী হবে তার জন্য আমাদের নিতে হবে বিশেষ পরিকল্পনা। 

ইতিমধ্যে, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ জনমনে আস্থা ও সম্ভাবনা তৈরী করেছে। বিশেষ করে, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদিশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড অভিবাসীদের সেবা দেবার জন্য অর্থ সরবরাহ করেছে এবং ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে, যা সময়উপযোগী ও প্রশংসীত।  এই এক কোটি অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের জন্য আরও বড় তহবিল গঠন করতে হবে। এই তহবিল হবে বাংলাদেশের সরকারের, গন্তব্য দেশের সরকার, নিয়োগকর্তা ও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সমন্বয়ে তহবিল। অভিবাসীদের নিজস্ব টাকায় ওয়েজ আর্নার্স কল্যান তহবিল থেকে নয়। 

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারনে যে সমস্ত অভিবাসী দেশে ফিরছেন বিমানবন্দরে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের হাত খরছের জন্য দেওয়া হচ্ছে পাচঁ হাজার টাকা। এইক্ষেত্রে পরামর্শ রয়েছে এই টাকা যেন বিদেশ ফেরত সবাই পায়, শুধু যারা সব আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া করে বিদেশে গিয়েছিলেন তারাই যেন নয় এবং টাকার পরিমাণ যাতে বৃদ্ধি করানো হয়। 

সরকারের পক্ষ থেকে ঘোষনা করা হয়েছে যে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কোনো বাংলাদেশী কর্মী মারা গেলে তিন লক্ষ টাকা পাবে। এইক্ষেত্রে পরামর্শ রয়েছে, এই টাকার পরিমাণ যেন বৃদ্ধি করানো হয়। কেননা স্বাভাবিক কারণেও যদি কোনো বাংলাদেশী কর্মী বিদেশে মারা যায় তাকেও সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া হয়। 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদিশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেছেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারনে যে সমস্ত অভিবাসী দেশে ফিরে আসবেন তাদের প্রত্যেককে পাচঁ থেকে সাত লক্ষ টাকা ঋণ পাবেন। এই টাকা দিয়ে বিদেশ ফেরত অভিবাসীরা কৃষি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারবেন।  এইক্ষেত্রে পরামর্শ রয়েছে, এই টাকার পরিমাণ যেন বৃদ্ধি করানো হয় এবং সহজ শর্তে সঠিক ব্যক্তিকে যেন দেওয়া হয়। 

দেশের অর্থনীতিতে অভিবাসীদের অবদানের কথা স্মরণ করে, করোনা চলাকালীন ও পরবর্তীতে দেশের অর্থনীতির চাঁকাকে সচল রাখার জন্য নিম্নের বিষয়গুলোকে অনুধাবন করতে হবে। স্বল্প ও মধ্য মেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে।

- বিশেষ করে, এই সময়ে যে সমস্ত অভিবাসী দেশে ফেরত এসেছেন বা যে সমস্ত অভিবাসী বিদেশে অবস্থান করছেন, লকডাউনের কারনে দেশে টাকা পাঠাতে পারছে না তাদের পরিবারকে প্রয়োজনে জরুরী খাবার, স্বাস্থ্য বিষয়ক উপকরণাদি বিতরণ, নগদ অর্থ সহায়তা ও করোনা প্রতিরোধ বিষয়ক জ্ঞান বিষয়ে অবহিত করতে হবে। যাতে তারা নিরাপদ ও সুস্থ থাকেন। প্রয়োজনে সরকারের সেফটি নেট প্রোগ্রামের আওতায় আনতে হবে।

- যে সমস্ত অভিবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে তাদের ভিসা নবায়নের জন্য কাজ করতে হবে। যে অভিবাসী তার নিয়োগকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে পারেছে না তার সাথে তার নিয়োগকর্তার সংযোগ স্থাপনে সহযোগিতা করতে হবে। যে সমস্ত অভিবাসী আর্থিক সংকটের কারনে ফ্লাইট খরছ সংস্থান করতে পারবে না তাদের ফ্লাইট খরছ জোগাড় করে দিতে হবে।

- যে সমস্ত সম্ভাব্য অভিবাসী বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল, করোনা পরিস্থিতির কারণে সবকিছু আটকে গেছে তাদের পরিবারকে প্রয়োজনে আর্থিক ও মানসিক সহযোগিতা প্রদান করা। সম্প্রতী প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, সৌদি আরব বেসরকারিখাতে সব ধরনের ভিসা বন্ধ করে দিচ্ছে। এর ফলে প্রায় এক লক্ষ অভিবাসী প্রত্যাশীর সৌদি আরবে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এখন সৌদি আরবে যারা অবস্থান করছে তাদের ভিসার মেয়াদ নবায়ন করা নিয়ে তৈরী হয়েছে শংকা। উদ্ভুট পরিস্থিতিতে বিদেশ যাওয়ার প্রক্রিয়ায় যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য শ্রমগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও নিয়োগকর্তার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা। প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরী হলে, সম্ভাব্য অভিবাসীকে তার বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত  দেবার ব্যবস্থা করা।

- যে সমস্ত অভিবাসীরা করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে ফিরতে বাধ্য করা হয়েছিল,তাদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সমূহ যথাযথ কর্তৃাক্ষের সাথে আলোচনা করে তা প্রদানে নিশ্চিত করা।

- বিশেষ করে, এই বিশেষ সময়ে লক্ষ করা যাচ্ছে বেশ কিছু  শ্রমগ্রহণকারী রাষ্ট্র অনিয়মিত অভিবাসীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিতে চাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক আইন বিরোধী। জরুরী অবস্থায় নিয়মিত-অনিয়মিত সকল অভিবাসীদের সুরক্ষা, শ্রমগ্রহণকারী দেশের কর্তব্য। এমতাবস্থায় আমাদের উচিত জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা। 

- বিদেশে অবস্থানকারী সমস্ত বাংলাদেশীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা, আর্থিক সহযোগিতা, করোনাভাইরাস নির্ণয় ও আক্রান্ত হলে শ্রমগ্রহণকারী রাষ্ট্রের সার্বিক তত্বাবধানে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। বিশেষ করে নারী অভিবাসীদের কর্ম পরিবেশের নিরাপত্তা ও অসুস্থ হলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এই সার্বিক কল্যাণে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী দূতাবাস, মিশন ও কনস্যূলেটে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা ও প্রয়োজনে শ্রমগ্রহণকারী রাষ্ট্রের কর্মকর্তা ও নিয়োগকর্তার সাথে আলোচনা করে বাংলাদেশীদের স্বার্থ সুরক্ষা করা।

- করোনাভাইরাস বিস্তারের জন্য অজান্তেই অভিবাসী পরিবারগুলোর প্রতি মানুষের একটা নেতিবাচক মনোভাব গড়ে ওঠেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের গ্রামে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। মরদেহ সৎকারের আপত্তি উঠেছে অনেক এলাকায়। চিকিৎসা সেবা নিতে যেয়েও তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই নেতিবাচক মনোভাব থেকে সমাজকে বের করতে চাই সরকার, গণমাধ্যম এবং বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক উদ্যোগ।

- বাংলাদেশে ফেরত আসা অভিবাসীদের একটি নির্ভরযোগ্য ডাটাবেইজ গঠন করা। বিশেষ করে, করোনা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ও ক্ষতিগ্রস্থ অভিবাসীদের তালিকা করতে হবে।  বর্তমানে, করোনা বিশেষ পরিস্থিতিতে  ফেরত বাংলাদেশীদের একটা ডাটাবেইজ পাওয়া গেলেও তাতে প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। এই ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফেরত অভিবাসীদের তথ্যের জন্য  সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সম্পৃক্ত করে এই ডাটাবেইজের কাজ সম্পন্ন করতে হবে। ফলে ফেরত আসা অভিবাসীদের একটি পূর্ণাঙ্গ তথ্য পাওয়া যাবে এবং তাদের অভিজ্ঞতা ও মেধাকে পরবর্তীতে কাজে লাগানো যাবে। বিশেষ করে এই ধরনে দুর্যোগ পরিস্থিতিতে এই ডাটা বেশ কাজে লাগবে। এই ডাটাবেইজের কাজটি তেমন জটিল হবে না, কারণ আমাদের বিদেশ যাওয়া কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ ডাটা রয়েছে, তার সাথে ফেরত আসা কর্মীদের লিংকেজ করালেই পুরো বিষয়টির একটি সঠিক হিসাব পাওয়া যেতে পারে। 

- বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী ব্যবস্থাপনা বিধিমালা,২০১৭ সংশোধন করে, মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্থ অভিবাসীদের অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি অর্ন্তভূক্ত করতে হবে। 

- আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) মতে করোনা পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দশটি অভিবাসী প্রবণ জেলার ( ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশাল, ব্রাক্ষণবাড়িয়া ও চাদঁপুর ) অভিবাসীদের আর্থ-সামাজিক ঝুঁকির কথা উল্লেখ করেছেন। তাই আমাদের অভিবাসী পূর্ণবাসন পরিকল্পনায় এই দশটি জেলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।

- সর্বোপরি করোনা পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে প্রভাব পড়েছে রেমিটেন্স প্রবাহে, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের মতে গত মার্চ মাসে প্রবাসীরা যে পরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছে যা বিগত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন যা খুবই চিন্তার বিষয়। তার জন্য আমাদের এখনি ভাবতে হবে। বাংলাদেশের যে শ্রম বাজারগুলো রয়েছে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও পূর্ব-এশিয়া সেই সমস্ত দেশের সাথে পারস্পরিক সর্ম্পক বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন নতুন শ্রম বাজার খুঁজতে হবে। করোনা পরবর্তীতে যে সুযোগ তৈরী হবে, তার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে প্রশিক্ষিত জনগোষ্ঠি তৈরী করতে হবে। যে সমস্ত শ্রমিকরা দেশে আসতে চাইছে বা বিদেশে বিপদগ্রস্থ তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে হবে। ফেরত আসা অভিবাসীদের আর্থিক ও সামাজিকভাবে একীকরণ করতে হবে। তাদের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে প্রয়োজনে স্বল্প-দক্ষদের প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করতে হবে। অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই করোনা পরবর্তীতে আমাদের অর্থনীতির চাঁকা সচল থাকবে।