শুক্রবার, ১০ নভেম্বর, ২০১৭

অসাম্প্রদায়িক চেতনা বাংলার চিরায়িত রুপ

ইতিহাস বলে বাংলাদেশের জনগণ অসাম্প্রদায়িক পক্ষের এক উজ্জল উদাহরণ। ব্যক্তি জীবনে আমরা বাংঙ্গালীরা বিভিন্ন ধর্মে বিশ^াসী হলেও সামাজিক জীবনে মায়ার বাঁধেন হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্দ, খ্রীষ্টান একে অপেরর সঙ্গে যেন মিলেমিশে একাকার।  সারা বছর এই বাংলায় যেন উৎসব লেগেই থাকে বছরে দু'টা ঈদ, শবে বরাত, কালী পূজা, দুর্গা পূজা, সরস্বতী পূজা, বৌদ্দ পূর্ণিমা, মাঘে পূর্ণিমা, চিবর দান, বড় দিন, নিউ ইয়্যার  যে বাপক উৎসাহ উদ্দীপনা হয় হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্দ-খ্রীষ্টান মাঝে তাতে বুঝা কঠিন কোনটা কার উৎসব।

রোজার ঈদে চাঁদ রাতে রাম-মালার ঘাটে বসে শিবু, লিটন, বিকাশ, শরীফ সবাই মিলে আমরা ঈদের চাঁদ দেখতাম। চাদঁ দেখা হলে আতঁশ বাজী ফুটাতাম। সকালে ঈদের নামায পরেই শিবু, লিটন, বিকাশ, শরীফ সবাই আমাদের বাসায় চলে আসত। দুপুরে খাওয়া-ধাওয়া করে বিকেলে সবাই বাড়ি ফিরত। শিবু, লিটন,বিকাশ মাংশ খেতনা বলে মা তাদের জন্য আলাদা করে মাছ ও মুরগীর মাংশ রান্না করত। ঈদ যে শিবু, লিটন,বিকাশদের উৎসব না এটা কখনো মনে হয়নি বা বুঝতাম না। রোযার সময় আরও মজা হত, সবাই মিলে ভোর রাতে সেহরী খাবার জন্য মহল্লায় দায়িত্ব পালন করতাম, তারাবীর নামায না পড়ে ঘোড়াঘোরি। সন্ধ্যার ইফতার সবাই মিলে ভাগাভাগি করে খেতাম। কোরবানী ঈদে অনেকে গরুর সাথে খাসী কোরবানি দিতেন, যাতে করে হিন্দু বন্ধুরা কোরবানির আনন্দে শামিল হতে পারে। আর শবে বরাত ও শবে কদরের রাতে সব বন্ধুরা মিলে সারা রাত জেগে শহরের বিভিন্ন মসজিদ ও মাজারে গিয়ে মিলাদে অংশগ্রহন। যার অন্যতম লক্ষ্য ছিল তাবারক সংগ্রহ।

একই ধরেনর ঘটনা ঘটেতা পূজার সময়, দুর্গা পূজা বাঙ্গালি হিন্দুদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। স্কুল থেকে ফেরার পথে পূজা মন্ডপ পরত, সেখানে মাঝে মাঝে গিয়ে পূজার প্রস্ততি দেখতাম। পূজার দিন সকাল থেকেই ঢাক বাজতে শুরু করত পাশাপাশি মাইকে পুরানো দিনের হিন্দি/বাংলা গান বাজত। আজানের সময় ঢাক ও গান বাজনা বন্ধ রাখা হত। সপ্তমীতে আমরা সবাই নতুন জামা পড়ে শিবু, লিটন, বিকাশদের বাড়ি যেতাম, তারাও নতুন জামা পড়ত। এলাকা এলাকা ঘুরে পূজা দেখতাম, চড়কিতে চড়তাম, নাড়–, সন্দেশ, জিলাপি খেতাম এবং ওরা অমাদের বাসায়ও এসব খাবার পাঠিয়ে দিত। পূজা মন্ডপের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করত আমাদের এলাকার মুসলমান বড় ভাইরা। এমন ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতীর উদাহরন পৃথিবীর কোথায় দেখা যায় না।

কিন্তু আজ ভাবতে সত্যিই কষ্ট হয়, যখন শুনি বা মিডিয়ায় দেখি হিন্দু, বৌদ্দ, খ্রীষ্টান ও আদিবাসিদের উপর হামলা হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রতিমা, মন্দিরে ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগ দেয়া হয়েছে। তাহলে কি আগের সেই পারস্পরিক সহাবস্থান ও শ্রদ্ধাবোধের জায়গা অনেকটা নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির জায়গায় কি ফাটল ধরছে। কিন্ত এটাত হবার কথা নয় বংশানুক্রমিক ভাবে যে জাতি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্দ, খ্রীষ্টান ও আদিবাসি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অটুট বন্ধনে বসবাস করে আসছে। সোশ্যাল মিডিয়ার ভুল তথ্য প্রচ্ারণায়, অপব্যবহার ও স¦ার্থনেস্বী মহলের অপচেষ্টায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জায়গায় মাঝে মধ্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে যেমন ২০১২ সালের রামু ট্র্যাজেডি, ২০১৬ সালে ব্রাক্ষনবাড়িয়ার নাসির নগরের হামলা, সম্প্রতি ২০১৭ সালে রংপুরে হিন্দু গ্রামে হামলা। সুবিধাভোগি স¦ার্থনেস্বী মহল আজ হাজার বছরের লালিত সংস্কৃতিকে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জায়গায় ফাটল ধরাচ্ছে। এই বিষয়ে আমাদের সর্তক থাকতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং এই বিষয়ে নিজে সচেতন হতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যেগ গ্রহন করতে হবে। সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য উস্কানি মূলক সংবাদ, তথ্য সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট, শেয়ার বন্ধ করতে হবে। এই দেশ আমাদের সবার মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্দ, খ্রীষ্টান ও আদিবাসি সবার সমান অধিকার। সবাই তার নিজস্ব ধর্ম-কর্ম পালন করার অধিকার রয়েছে।
মনে রাখতে হবে বৈচিত্রতা জাতিকে সমৃদ্ধ ও সুন্দর করে । একটি দেশ তখনই  সমৃদ্ধ ও উন্নত যখন সকল ধর্ম ও মতের লোকেরা সমান রক্ষিত ও স্বাধীন। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রিয় বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক দেশ হিসেবে গড়ে তুলে সম্প্রীতীর দৃষ্টান্তকে পুনরায় স্থাপন করতে হবে। একই সুরে সবাই মিলে আগের মত করে গাইতে চাই, গ্রামের নওজাওয়ান হিন্দু-মুসলমান মিলিয়া বাংলা গার আর মুশির্দী গাইতাম..আগে কি সুন্দর  দিন কাটাইতাম..।