রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯

আমাদের প্রজন্মকে যোগ্য করে তুলতে বই পাঠের বিকল্প নেই

বই পড়ার সাথে জ্ঞানের গভীর সর্ম্পক রয়েছে। বই পড়লে মানুষের জ্ঞান বাড়ে। জ্ঞানের চর্চা মানুষকে মহৎপ্রাণ করে তুলে, চিত্তকে মুক্তি দেয় এবং মানবাত্মাকে জীবনেবোধে বিকশিত করে। বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানার্জন ও মানসিক শান্তি লাভ করতে হলে বই পড়া দরকার। বই পড়ার গুরুত্ব আমরা জ্ঞানী ও মনীষীদের উক্তি থেকে বুঝতে পারি। 

ওমর খৈয়াম বলেন; মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্ত বইখানা অনন্ত যৌবনা- যদি তেমন বই হয়।

স্পিনাজো বলেন- ভাল খাদ্য বস্ত পেট ভরে কিন্ত ভাল বই মানুষের আত্মাকে পরিতৃপ্ত করে। নেপোলিয়ান বলেন-অন্তত ষাট হাজার বই না থাকলে জীবন অচল। নর্মান মেলর বলেন-আমি চাই যে, পাঠরত অবস্থায় যেন আমার মৃত্যু হয়। যুগে যুগে এই রকমভাবে মনীষীরা বই পড়ার গুরুত্ব মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন। গ্রীসের থিবসের লাইব্রেরির দরজায় খোদাই করা আছে “আত্মার ঔষুধ”। তাদের বিশ^াস বই হলো আত্মার চিকিৎসার প্রধান উপকরণ। 

বই পড়া সচেতন মানুষের কাছে দেশ নিরাপদ ও স্থিতিশীল। যারা বড় হতে চাও তাদের প্রয়োজন বেশি বেশি করে বই পড়া। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বই পড়ার প্রতি এত বেশি আসক্ত ছিলেন যে, লাইব্রেরি কক্ষে কর্মচারীরা তার নির্বিষ্ট পাঠক মনের উপস্থিতি পর্যন্ত টের পেত না। তাই বহুবার তিনি লাইব্রেরি কক্ষে তালাবন্দি হয়েছেন। বই পাঠের প্রতি আসক্তির কারণেই তিনি হয়ে উঠেন অগাধ পন্ডিত্য ও বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী। 

একটি ভালো বই যেকোনো সময় মানুষকে বদলে দিতে পারে। তার মানবিক সুকোমল বৃত্তিগুলোকে বিকশিত করে দায়িত্বসচেতন, দেশপ্রেমিক নাগরিকে পরিণত করে। বই পড়া’র অভ্যাস না থাকার কারণে সমাজে, মানকিবতা, মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যপ্রীতি বিনিষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম বই ছেড়ে প্রযুক্তির অপব্যবহারে আসক্ত। গবেষণায় দেখা যায়, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েরা দিনে পাচঁ থেকে আট ঘন্টা ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যন্ত্র নিয়ে মেতে থাকছে। ভ্রমনে, অবসরে বা বিনোদনে হাতে বই নিয়ে বসা তো দূরের কথা ডিজিটাল যন্ত্রের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা মেতে থাকছে। এমনকি সামাজিক কোনো অনুষ্ঠানে পাশাপাশি বসলেও একে অপরের সাথে কোনো কুশল বিনিময় হয় না। ডিজিটাল যন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। যার ফলে বর্তমান প্রজন্ম ও আমাদের ভবিষৎ উন্নত শারিরীক গঠন, সামাজিক সংহতি ও মানসিক প্রশান্তি মধ্যে বেড়ে ওঠার সুযোগ হারিয়ে ফেলছি। বর্তমান প্রজন্মকে এর থেকে উত্তরণের উপায় হল তাদেরকে বইমুখী করতে হবে। ছোট সস্তানদের সামনে ফোন বের করবেন না। ওরা যখন ফোন দেখবে না তখন এর প্রতি আর্কষণ অনুভব করবে না। তাদের হাতে বই তুলে দেন। 

দেশের ভবিষৎকে সুখী, সুন্দর ও সমৃদ্ধশালী করে গড়ে তুলতে বই পড়ায় সচেষ্ট করতে হবে। উন্নত জাতি ও রাষ্ট্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে হলে জ্ঞান ও শিক্ষার সমন্বয়ে বড় মনের আলোকিত মানুষ হতে হবে। নতুন প্রজন্মের কাছে যত বেশি বই পৌছে দেওয়া যাবে ততই তারা জ্ঞানসমৃদ্ধ হবে। গবেষণায় দেখা যায় নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস করলে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বাড়ে ও জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা হ্রাস পায়।

তরুণ প্রজন্মকে যোগ্য করে তুলতে পাঠের বিকল্প নেই। ’একটি ঘর, একটি লাইব্রেরি’ এ স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে হবে। ছাত্রজীবন থেকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। গ্রামগঞ্জে পাঠগারের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠি বই পড়া ও কেনার সুযোগ পায়। পাশাপাশি স্কুল কলেজে বিজ্ঞান মেলার সাথে বই মেলার আয়োজন করতে হবে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন বইয়ের সাথে পরিছয় হবে এবং বই পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। স্কুল-কলেজে বার্ষিক খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় পুরুষ্কার হিসেবে বই দিতে হবে। সামাজিক অনুষ্ঠানে বই উপহার হিসেবে দেবার ও গ্রহণ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংস্থায় এমনকি কর্মস্থলে/ঘরে একটি করে লাইব্রেরি স্থাপন করতে হবে। যার ফলে মানুষের বই পড়ার আগ্রহ তৈরী হবে ও জ্ঞান নির্ভর জাতি গড়ে ওঠবে।