শনিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বাংলাদেশে ঋতুভেদে রোগের প্রার্দুভাব ও করণীয়

পরিবেশ, জলবায়ু এবং ভৌগলিক অবস্থান যেমন রোগর বিস্তার ও বৈচিত্রে ভূমিকা রাখে তেমনি ঋতু পরিবর্তনও রোগের বিস্তার ও বৈচিত্রে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশ ছয় ঋতুর একটি দেশ। জলবায়ুগত পরিবর্তনের কারণে এখনশুধু তিনটি ঋতু দৃশ্যমান হয় যেমন, গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীত। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের মাঝে নানা রোগব্যাধির প্রবণতা দেখা যায়। এমনকি দিনে অথবা রাতে; সকালে কিংবা দুপুরে; বিকেলে অথবা সন্ধ্যায় কোন কোন রোগের প্রবণতা দেখা যায়। ঋতুর এই পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শিশুসহ সব বয়সের মানুষের মধ্যে রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। তার মধ্য শিশু ও প্রবীণরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে রোগাক্রান্ত হওয়ার। ঋতুর বৈশিষ্টগত পরিবর্তন রোগের নানা উপলক্ষকে ত্বরান্বিত করে, যার ফলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বেড়ে যায়।

ঋতুর এই পরিবর্তনের সঙ্গে রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকির সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলেন ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশে তাপমাত্রার তারতম্য আসে। আর এই তারমাত্রার তারতম্য নানা ধরণের রোগ জীবাণুর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলে। তাই দেখা যায় ফ্লু ও অন্যান্য ভাইরাসজনিত নানা রোগে খুব সহজেই মানুষ আক্রান্ত হয়।

গ্রীষ্মকালে (মার্চ-জুন) প্রচন্ড তাপ ও আর্দ্রতা পরিবর্তনের ফলে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়  ও পানি শূন্যতা দেখা দেয়। অতিরিক্ত এই ঘামের ফলে মানুষের শরীরে নানা জীবাণুর সংক্রমণ হয়, যা বিভিন্ন অসুস্থতা ও জ্বরের খুব স্বাভাবিক কারণ। গরমকালে কারো কারো অ্যালার্জির সমস্যা বেড়ে যায়। ধুলাবালুর ফলে চোখ জ্বালাপোড়া দেখা দেয়, চোখে ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ হয়। এছাড়া পেটের নানা সমস্যাও অতিরিক্ত গরমে বেড়ে যায়। গরমে সাধারণত মানুষ বাইরের খাবার বা পানীয় বেশি খাওয়া হয়, ফলে পেটের সমস্যা বিশেষ করে নানা পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায় যেমন ডাইরিয়া, জন্ডিস ইত্যাদি। মার্চ-জুন পর্যন্ত এইসব রোগের প্রার্দুভাব বেশি থাকে।

বর্ষাকাল (জুলাই-অক্টোবর), আর্দ্রতার জন্য চর্মরোগ, খোঁজ-পাচড়া, একজিমা ইত্যাদিতে আক্রান্ত হবার প্রবণতা বেশি থাকে। বর্ষার আর্দ্র আবহাওয়ায় কনজাংটিভাইটিসের (চোখ উঠা) মতো কিছু চোখের সমস্যার ঝুঁকি রয়েছে। জনস্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলেন বৃষ্টি আর গরমের সমন্বয়ে কনজাংটিভাইটিসের ঝুঁকি বাড়ে। এই সময়ে লক্ষ্য করা যায় বাংলাদেশে প্রতি দশজনে একজন এই রোগে আক্রান্ত। চোখ উঠা একটি ভাইরাসজনিত ইনফেকশন। চোখে প্রদাহ হলে চোখের পানিতে ভাইরাস ভেসে বেড়ায়। যখন এই অশ্রু মুছতে যাই, তখনই এটি আমাদের হাতে এসে যায়। এরপর থেকেই সেই হাত দিয়েই আমরা যা কিছুই ছুঁই না কেন, সেখানে ভাইরাস চলে আসে। তাই এই সময় খুবই সতর্ক থাকতে হবে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকলে এই রোগ থেকে অনেকটা নিস্তার দিতে পারে। এই সময় শিশুদের মধ্যে আরেকটি রোগ দেখা দেয় তা হল হ্যান্ড–ফুট–মাউথ। এটি একটি ভাইরাসবাহিত রোগ  ও খু্ব সংক্রামক। এই সময় মশাবাহিত কারণে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার প্রার্দুভাব বেড়ে যেতে পারে। এই সমস্ত রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিলে ভীতির কোন কারণ নেই। সচেতন হতে হবে,  পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে ও চিকিৎসকের পরামর্শ মানতে হবে।

শীতকালে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী) শুষ্কতার জন্য অ্যালার্জির প্রবণতা অনেক বেড়ে যায়। শুষ্কতায় ত্বক ফাটা, অ্যাকজিমা, সোরিয়াসিস ছাড়াও ঠান্ডা, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যাও বেড়ে যায়। এই সময় শিশুরা ও বয়স্করা বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে আসে ফ্লু জাতীয় বিভিন্ন ছোঁয়াচে রোগ যা খুব দ্রুত একজন থেকে অন্যজনে ছড়িয়ে পড়ে। ঠান্ডা বা সর্দির জন্য দায়ী রাইনো ভাইরাস বা করোনা ভাইরাসও একটু ঠান্ডা আবহাওয়া থাকলেই দ্রুত ছড়ায়। আবার শীতের শুষ্ক বাতাসে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের বিস্তার ঘটে দ্রুত এবং সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করে। ব্যাক্টেরিয়াজনিত ইনফেকশন এবং সাইনাস এর সমস্যাও এই সময় বেড়ে যায়। শুকনো বাতাসে ধুলাবালি বেড়ে গিয়ে নানা ধরণের অ্যালার্জির সমস্যাও সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে বাতাসের সাথে সংশ্লিষ্ট যেসব রোগ-ব্যাধি তার প্রকোপ ঐসময় বেড়ে যায়। নভেম্বর-ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত এইসব রোগের প্রার্দুভাব বেশি থাকে।

আমাদের যাঁদের ঋতুর পরিবর্তনের সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্যা রোগ-ব্যাধির প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা আছে তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিজেরাই অনেক সমস্যার সমাধান করতে পারেন। যে ঋতু বা যেসব জিনিস সহ্য হয় না ঐ ঋতু বা ঐসব জিনিস খুঁজে বের করা এবং সে সময় সতর্ক থাকা এবং ঐ জিনিসগুলো এড়িয়ে চলা উত্তম। যেমন যদি কারো গরম কিছু সহ্য না হয়, তাহলে সব সময়ই গরম কিছু থেকে সতর্ক থাকা। যদি কারো শীত বা ঠান্ডা সহ্য না হয় তাহলে ঠান্ডা যা কিছু থেকে সতর্ক থাকা এমন আর কি। আর যাঁদের যে খাবারে এলার্জি আছে তা পরিহার করে চলা। এমন সব ক্ষেত্রে পরিবারের লোকজন এবং নিজে অনেক সমস্যাই মিটিয়ে ফেলা যায়। প্রতিবছর একই সময়ে একই ধরনের রোগ যাঁদের হানা দেয় তাঁরা আসলে চিররোগের পর্যায়ভুক্ত। সে কারণে এমন ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী চিকিৎসা নেয়া দরকার, সাময়িক চিকিৎসা তাঁদের জন্য তত ফলপ্রসূ হবে না। কারণ, চিররোগগুলো শরীরের মধ্যে ধীরে ধীরে বাসা বাঁধে। যে রোগগুলি হঠাৎ দেখা দেয় সেসব ক্ষেত্রে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা এবং মৃত্যুবরণ করা দুটোই কিন্তু আছে। কিন্তু চিররোগের ক্ষেত্রে চিররোগের ধারাক্রম অনুসরণ করেই চিকিৎসা নিতে হবে। প্রারম্ভেই যদি রোগ শনাক্ত করা যায় তাহলে তার প্রতিকার পাওয়া অসম্ভব কিছু নয়। কিন্তু রোগ যদি আরোগ্যের পর্যায়সীমা অতিক্রম করে তাহলে কোন চিকিৎসক কিংবা ওষুধের পক্ষেই তা আরোগ্য করা সম্ভব নয়। শত চেষ্টায় হয়তো কিছুটা সাময়িক উপশম দেয়া যাবে। তাই যে কোন ধরনের শারীরিক পরিবর্তন ও লক্ষণ সম্বন্ধে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কারণ, প্রতিটি রোগেরই নির্দিষ্ট লক্ষণ থাকে। রোগ লক্ষণ মানুষের ভোগান্তি নয় উপকার করে, লক্ষণ কোন মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না, ডাক্তার দেখানোর ইঙ্গিত দেয়। তবে যদি কেউ একটি বা দু’টি লক্ষণ ধরে তার গোড়ায় না গিয়ে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে কিন্তু প্রকৃত রোগ আরোগ্য দুরূহ হয়ে পড়ে। তাই সেদিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি।

তাই ঋতু পরিবর্তনের সময় সুস্থ থাকার জন্য চাই সচেতনতা, পর্যাপ্ত ঘুম, শরীরচর্চা ও পরিচ্ছন্ন থাকা। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তুলবে।

রেফারেন্সঃ

https://www.ntvbd.com/health/ ঋতু-পরিবর্তনের-সময়-যেসব-রোগ-হয়

https://www.risingbd.com/feature/news/284036

https://www.womennews24.com/ ঋতু-পরিবর্তনের-রোগ-ব্যাধি/

https://www.jaijaidinbd.com/feature/health/85362/ ঋতুর-পরিবর্তনে-রোগব্যাধি-কেন-বাড়ে

https://bn.wikipedia.org/wiki/ চোখ_উঠা




শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বিশ্বায়ন এবং সংক্রামক রোগের বিস্তারঃ একটি আন্তসম্পর্ক বিশ্লেষণ

বিশ্বব্যাপী বাধাহীনভাবে বাণিজ্য ও সেবা পরিচালনার নীতিমালাকে বিশ্বায়ন বলে। এটি একটি সামগ্রিক ধারনা। বিশ্বায়ন হলো সাড়া বিশ্বকে নির্দিষ্ট কিছু স্থান থেকে শাসন করার নতুন অথনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কৌশল। বিশ্বায়ণ হল দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ন্ত্রনের জন্য ধনী রাষ্ট্রগুলোর অথনৈতিক ধারণা। বিশ্বায়নের সময়কালকে বিবেচনা করে এর ইতিহাসকে তিনটি স্তরে একে ভাগ করা যায়। ১ম স্তরঃ(বিশ্বায়নের প্রাথমিক যুগঃ১২০০-১৮৫০) এটাকে উপনিবেশিক যুগও বলা হয়। এ সময় ইউরোপের দেশগুলো উত্তর ও দক্ষিন আমেরিকা আবিষ্কার করে ও সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করে। ইউরোপ থেকে আফ্রিকা ও এশিয়ার আসার পথ আবিষ্কার হয় এবং এখানেও তারা কৌশলে উপনিবেশ স্থাপন করে। এসময় থেকেই বানিজ্যের বিকাশ ঘটে ও অবাধ বানিজ্যের ধারণা সৃষ্টি হয়।  ঐ সময় থেকে এক অঞ্চলের রোগ আরেক অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে। এ স্তর থেকেই বিশ্বায়ন শুরু হয়। ২য় স্তরঃ (বহুজাতিক কোম্পানীর যুগঃ ১৮৫০-১৯১৫) এ যুগে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে। আর নতুন নতুন ব্যবসা আবিষ্কার হয়। এ যুগে এসে পুজিবাদের ধারণার উদ্ভাবন হয়। ভূমি দখলের চেয়ে ব্যক্তিগত সম্পদ ও অর্থ বৃদ্ধির ধারণা আসে। বানিজ্যের আধিপত্য নিয়ে লড়াই হত এ স্তরে। এ স্তরে এসে বিশ্বায়নের ভিক্তি তৈরি করে। ৩য় স্তরঃ (আধুনিক বিশ্বায়নের যুগঃ ১৯৪৫-বর্তমান) এ স্তরে বিশ্বায়ন প্রতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে, যা এখন চলমান।

বিশ্বায়নের ফলে সংক্রামকরোগ রোগগুলি দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। সংক্রামক রোগ বলতে সেই সব রোগ বোঝায়, যেসব রোগ একজন থেকে আর একজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ছড়িয়ে পড়া শুধু মানুষ থেকে মানুষ নয়, পশু পাখি থেকে মানুষে, পশু পাখি থেকে পশু পাখির মাঝে, কিংবা মানুষ থেকে পশু পাখির মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে। ইটিওলজি, বিজ্ঞানের আধুনিক শাখা যা সংক্রামক রোগের কারণগুলি নিয়ে কাজ করে, সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পরার পাঁচটি প্রধান মাধ্যমে হলো: বায়ু, জল, রক্ত, সরাসরি যোগাযোগ এবং ভেক্টরের মাধ্যমে (পতঙ্গ বা অন্যান্য প্রাণী যা এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিকে বহন করে)। গবেষণায় দেখা যায়, ভৌগলিক পরিবেশের পাশাপাশি বিশ্বায়নের ফলে বৈশ্বিকভাবে রোগ-ব্যাধি ছড়াচ্ছে। বিশ্বায়নের ফলে বাণিজ্যিক পথগুলো প্রতিণ্ঠিত হয়েছে রোগের সংক্রমণও বৃদ্ধি পেয়েছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠি নতুন নতুন রোগে আক্রান্ত হয়েছে।

যেমন গুটি, হাম এবং যক্ষ্মা (টিবি) ইউরোপ থেকে এশিয়া এবং আফ্রিকায়ে বাণিজ্যের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছিল। ইউরোপীয়রা যখন ব্যবসার উদ্দ্যেশে এশিয়া  আফ্রিকা উপনিবেশ স্থাপন করেছিল তখন থেকে এই সমস্ত রোগগুলো এশিয়া ও  আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। বেশিরভাগ নির্দিষ্ট রোগ যেমন; প্লেগ, সিফিলিস, কুষ্ঠ, টাইফয়েড, কলেরা, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি/এইডস, যক্ষ্মা আঞ্চলিকভাবে ভ্রমনের মাধ্যমে ছড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কুষ্ঠরোগ প্রথম ভারতে নিবন্ধিত হয়েছিল এবং সেই অঞ্চলে ঔপনিবেশিক যুদ্ধের মাধ্যমে এক এলাকা থেকে অন্য অঞ্চলে স্থানান্তরিত হয়েছিল। 

আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমে রোগ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন সংক্রমকরোগর ভেক্টরগুলোর মাধ্যমে। এরকম একটি উদাহরণ হল পশ্চিম নীল ভাইরাস। বিশ্বাস করা হয় যে এই রোগটি পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্রে "মশার মাধ্যমে যা বিমান চাকা চড়ে সমুদ্র অতিক্রম করেছিল এবং ১৯৯৯ সালে নিউ ইয়র্ক সিটিতে এসে পৌঁছেছিল। রোগের বিস্তার বৃদ্ধিতে আধুনিক পরিবহণের ব্যবহার আরও একটি উদাহরণ হ'ল ১৯১৮ স্প্যানিশ ফ্লু মহামারী । বিশ শতকের গোড়ার দিকে গ্লোবাল ট্রান্সপোর্টেশন ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল কারণ ট্রান্সমিট্যান্স এবং বাণিজ্যের নেটওয়ার্ক ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাপী ছিল। এই ভাইরাসটি জাহাজ এবং ট্রেনের ক্রু সদস্যদের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল এবং সংক্রামিত সমস্ত কর্মচারী তারা যেখানেই ভ্রমণ করেছিল সেখানেই এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে দিয়েছিল। ফলস্বরূপ, প্রায় ৫০-১০০ মিলিয়ন মানুষ সারা বিশ্বে এর সংক্রমণে মারা গিয়েছিল। রোগের বিবর্তন আধুনিক যুগে একটি বড় হুমকি উপস্থাপন করে। উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান "সোয়াইন ফ্লু" বা এইচ-১ এন-১ ভাইরাস ফ্লুটির একটি পুরানো ফর্মের একটি নতুন স্ট্রেন, যা এই মহাদেশে এর উৎসের ভিত্তিতে শতাব্দী ধরে এশিয়ান ফ্লু হিসাবে পরিচিত। 

ইতিহাসে কিছু ভয়ঙ্কর মহামারির বিস্তার বিশ্লেষণঃ

প্লেগঃ

মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারি ছিল বিউবোনিক প্লেগের প্রার্দুভাব। মধ্য এশিয়ার সমভূমিতে/চীনে এই রোগের উৎপত্তি বলে ধারণা করা হয়, ১৩৩০ সালে। এরপর এটি সিল্ক রোড হয়ে ১৩৪৩ সালের দিকে এটি ক্রিমিয়া পর্যন্ত পৌছায়। বণিকদের জাহাজে বসবাস করা ‘কালো ইঁদুর’ ও ‘ইঁদুর মাছি’ নামক দুইটি প্রজাতির মাধ্যমে এটি ভূমধ্যসাগর এবং ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। পৃথিবীব্যাপি ছড়িয়ে পড়া এই মহামারীর কবলে পড়ে ১৩৪৬-১৩৫৩ সালের মধ্যে ইউরোপ এবং এশিয়া মহাদেশের (ইউরেশিয়া) ৭৫ থেকে ২০০ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এই মহামারীর কবলে পড়ে ১৪’শ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৫০-৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে।

হাম/ গুটিবসন্তঃ

হাম একটি অত্যন্ত সংক্রামক বায়ুবাহিত রোগ। ১৪৯২ সালে কলম্বাস কর্তৃক আমেরিকা আবিষ্কারের পরে ষোলো শতকে ক্যারিবীয় অঞ্চলে গুটি বসন্তের প্রার্দুভাব দেখা দেয়। ১৭ শতকে আরও দুই মিলিয়ন স্থানীয় মেক্সিকান হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিল। ১৬১৮-১৬১৯ সালে আদি আমেরিকানদের ৯০% মানুষ গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলো। ১৭৭০ এর দশকে, গুটিবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রশান্ত মহাসাগরীয় উত্তর পশ্চিম আদিবাসী আমেরিকানদের কমপক্ষে ৩০% মানুষ মৃত্যুবরণ করেছিল। এই রোগে বিশ্বব্যাপী অনেকলোক মারা যায়। দ্য গুটি টিকা ১৭৯৮ আবিস্কার করে এডওয়ার্ড জেনার । ১৯৭৯ সালে এই রোগটি পুরোপুরি হয়ে গেছে নির্মূল হয়ে গেছে, এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৮৬ সালে এর ভ্যাকসিন সরবরাহ করা বন্ধ করে দিয়েছে।

টাইফাসঃ

টাইফাস মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয় উকুন এর মাধ্যমে এর প্রধান ভেক্টর হল ইঁদুরের কামড়। টাইফাসের প্রথম প্রাদুর্ভাবটি ১৪৮৯ সালে বলকান অঞ্চলে। ১৫০০ সালে এটি সমস্ত ইউরোপে ছড়িয়ে পরে। ১৯১৮ থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ায় মহামারী টাইফাসে প্রায় ২৫ মিলিয়ন মানুষ সংক্রমিত এবং ৩ মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

সিফিলিসঃ

সিফিলিস হ'ল ক যৌনবাহিত রোগ এর বৈশিষ্ট্যযুক্ত যৌনাঙ্গে আলসার । সিফিলিস স্নায়ুতন্ত্র, মস্তিষ্ক এবং হার্টের ক্ষতিও করতে পারে। এই রোগটি মা থেকে সন্তানের কাছে সংক্রামিত হতে পারে। এই রোগের উৎস নিয়ে বিতর্ক রয়েছে, অনেক ইতিহাসবিদদের যুক্তি রয়েছে যে এটি বিশ-হাজার বছরের পুরানো আফ্রিকান থেকে এসেছিল। অন্যান্য ইতিহাসবিদদের মতে কলম্বাসের জাহাজের ক্রুরা প্রথমে এই রোগ নিয়ে এসেছিল ইউরোপে।

কুষ্ঠরোগঃ 

কুষ্ঠরোগ যা হ্যানসেনের রোগ হিসাবেও পরিচিত। কুষ্ঠরোগের সর্বাধিক সাধারণ লক্ষণ হ'ল ত্বকে ফ্যাকাশে লালচে দাগ যা সংবেদন অনুভব করে। কুষ্ঠরোগের উদ্ভব হয়েছিল ভারত চার হাজারেরও বেশি বছর আগে। এটি প্রাচীন সমাজগুলিতে প্রচলিত ছিল চীন, মিশর এবং ভারত, এবং সহ ভ্রমণকারী বিভিন্ন গোষ্ঠী দ্বারা বিশ্বজুড়ে সঞ্চারিত হয়েছিল।

এইচআইভি এবং এইডসঃ

এইচআইভি এবং এইডস নতুন এবং মারাত্মক রোগগুলির মধ্যে একটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এটির উৎস কোথায় তা জানা যায় নি, তবে এটি প্রাণী থেকে মানুষের কাছে এসেছে। ১৯৮১ সালে প্রথম দুটি এইডস / এইচআইভি কেস সনাক্ত করা হয়েছিল। বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৩৫ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভিতে বাস করছে।

কলেরাঃ

উনিশ শতকে কলেরা একটি ব্যাপক আকার ধারণ করেছিল, যাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ এতে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলো। এই মহামারীটি বঙ্গ থেকে শুরু হয়েছিল এবং তারপরে ১৮২০ সালের মধ্যে এটি পুরো ভারত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এই রোগটি সমস্ত ইউরোপ ছড়িয়ে পরে।  মহামারীটি ইউরোপ থেকে আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা এবং মধ্য আমেরিকায় পৌঁছায় ও ব্যাপক প্রাণহানি ঘটায়। অঠারো শতক থেকে শুরু করে বিশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত এইরোগরে প্রার্দুভাব ছিল।

কোভিড-১৯

কোভিড-১৯ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের উদ্ভব চীনের উহান শহরে। এটি ডিসেম্বর ২০১৯ সালে প্রথম সনাক্ত করা হয়েছিল, এজন্য বিজ্ঞানীরা এটিকে বলেছিলেন COVID-19 (করোনাভাইরাস রোগ 2019)। ২০২০ সালের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে এটিকে মহামারী হিসাবে ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে এই পর্যন্ত এই রোগে ২০,১৬,৯৪৬ জন আক্রান্ত হয়েছে এবং ২৩,৩৩৯ জন মারা গেছে। পৃথিবীব্যাপী ৬১.৬২ কোটি লোক আক্রান্ত হয়েছে এবং ৬.৫ মিলিয়ন লোক মারা গেছে। মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি ও টিকা আবিস্কারের মাধ্যমে মৃত্যুর সংখ্যা কমে এসেছে।

বিশ্বায়ন ও সংক্রামক রোগের বিস্তার পারস্পরিক আন্তসম্পর্ক যুক্ত। বিশ্বব্যাপী অবাধ বাণিজ্য ও যোগাযোগের সুবিধার্থে কারণে এক অঞ্চলের রোগ অন্য অঞ্চলে দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ছে। দেশে দেশে মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। পৃথিবীতে যুগে যুগে অসংখ্য মহামারীর ঘটনা ঘটেছে এবং এসব মহামারীতে মৃত্যু হয়েছে কোটি কোটি মানুষের। ক্ষতি ও হানির কথা চিন্তা করলে উন্নয়নশীল দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সম্প্রতী লক্ষ্য করা যায়, করোনার টিকাপ্রাপ্তিতে ধনী-গরিব দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্যে চরম আকার ধারন করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বেশির ভাগ টিকাই পাচ্ছে উন্নত দেশগুলো। এসব দেশে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৬ শতাংশের বাস। এই সমস্যার সমাধানে উন্নত দেশগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে, তাহলেই বিশ্ব পাবে বিশ্বায়নের সুফল। একইভাবে, মহামারি মোকাবেলা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি হ্রাসকরণের প্রযুক্তিগত সুবিধা উন্নত বিশ্ব উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রদান করতে হবে, যেমন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা মেশিন লার্নিংয়ের ওপর নির্ভরতা বাড়ানোর দক্ষতা  ও কলকারখানায় অটোমেশন ইত্যাদি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য সবাই বিশ্বায়নের নতুন এক কাঠামোর কথা বলছেন তখন করোনা ভাইরাস মহামারী সবাইকে বিশ্বায়নের ঝুঁকির কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আশার কথা, করোনা ভাইরাস আমাদের এটাও মনে করিয়ে দিচ্ছে যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে প্রযুক্তি কীভাবে মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে, ক্ষয়-হানি কমিয়ে আনতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। বিশ্বায়নের সুবিধা নিশ্চিত করতে হলে উন্নত দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশে দাড়াতে হবে। সর্বোপরি বিশ্বায়ন প্রভাব ফেলছে স্থানীয় স্বাস্থ্যের ওপর। আমাদের তাই ভাবতে হবে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে, কিন্তু প্রস্ততি নিতে হবে স্থানীয় পরিপ্রেক্ষিতে।

Source:

https://wikigbn.icu/wiki/Globalization_and_disease

https://bn.wikipedia.org/wiki/সংক্রামক_রোগ

https://www.protichinta.com/বিশ্ব-স্বাস্থ্যের-পরিপ্রেক্ষিত-ও-বাংলাদেশ

https://bn.wikipedia.org/wiki/বৈশ্বিক_মহামারী

https://www.risingbd.com/feature/news/418193

https://www.researchgate.net/publication/353483033_bisbayana_kiera_itihasa_karana_bikasa_prabhaba_o_phalaphala

http://covid19tracker.gov.bd/

https://www.banglatribune.com/columns/613623/করোনা-ভাইরাস-এবং-বিশ্বায়নের-উল্টোযাত্রা












শনিবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

পরিবেশ, জলবায়ু ও রোগ-ব্যাধির প্রকোপ-বিস্তার আন্তসম্পর্ক বিশ্লেষণ

রোগ-ব্যাধির প্রকোপ ও বিস্তার মানব সমাজের সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম। এই সমস্যার প্রকটতা ব্যাক্তি, সমাজ, অঞ্চল, রাস্ট্র ও মহাদেশ ভিত্তিক ভ্ন্নি হতে পারে। রোগ-ব্যাধির প্রকোপ ও বিস্তার ভৌগলিক পরিবেশ এবং আর্থ সামাজিক অবস্থা, জলবায়ু দ্বারা প্রভাবিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়। পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে তা প্রথম বলেছিলেন হিপ্পোক্রেটস (৪৬০-৩৭০ খ্রী.)। তিনি বলেছিলেন যে "বায়ু, জল, স্থান" সবই মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেছিলেন, একজন চিকিৎসকের রোগের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে রোগীর চিকিৎসা করা। যেমন- রোগীর প্রতিদিনকার জীবনযাত্রা, তার পিতা-মাতাদের রোগের ইতিহাস, তার কাজকর্ম, কোন পরিবেশে সে বসবাস করে। এই সব তথ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রেখেই রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা নির্ধারণ করা।
রোগ-ব্যাধির প্রকোপ ও বিস্তার যে, ভৌগলিক পরিবেশদ্বারা প্রভাবিত হয় তার একটি অন্যতম উদাহরণ হল ১৮৫৪ সালে লন্ডনের ব্রড স্ট্রিটে কলেরার প্রকোপের কারণ নির্ণয়ের মাধ্যমে। তখন লন্ডনের ব্রড স্ট্রিটে মৃত্যুর পরিমাণ বেড়ে যায় এবং লোকেরা আশঙ্কা করেছিল যে তারা মাটি থেকে উঠা বাষ্পের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। জন স্নো কলেরাতে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বাড়িঘর এবং জল পাম্পগুলির অবস্থান চিত্রিত করে একটি মানচিত্র আঁকেন। তিনি দেখতে পান যে ব্রড স্ট্রিটের পাম্পকে কেন্দ্র করে কাছাকাছি দূরত্বে থাকা বাড়িগুলোতেই কলেরায় মৃতদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। পাম্প থেকে যতদূরে বাড়ির অবস্থান, মৃতের হার তত কম। তিনি উপসংহারে পৌঁছেলেন যে এই পাম্পের দূষিত পানিই রোগাক্রান্ত ক্ষেত্রে দায়ী। তিনি কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিলেন যেন পাম্পটির হাতল সরিয়ে ফেলতে। ফলস্বরূপ, নতুন কলেরা আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পেতে থাকে। 

পৃথিবীর ভৌগলিক পরিবেশ ও জলবায়ু স্থান অঞ্চলভেদে ভিন্ন। এটি লক্ষ্য করা গেছে যে বেশিরভাগ রোগ-ব্যাধি নির্দিষ্ট ভৌগলিক অঞ্চল, নির্দিষ্ট পরিবেশ ও জলবায়ুর সাথে সম্পর্কিত। প্রাণী এবং গাছপালা বিস্তরণ জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলগুলি উষ্ণ এবং আর্দ্র, তাই সেখানে বিভিন্ন বৈচিত্রজাতের উদ্ভিদ ও বন্যপ্রাণী রয়েছে। রোগের বিকাশের জন্য এটিও প্রধান শর্ত। যদি আমরা শীতল অঞ্চলে চলে যাই (উচ্চ অক্ষাংশ এবং উচ্চতর উচ্চতায়) বন্যপ্রাণীর বৈচিত্রতা কম, রোগের বিস্তার ও সেখানে কম। রোগের বিস্তার উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে বিভিন্ন পোকামাকড়/ অনুজীবদের অবস্থান ও তার প্রজনন করার অনুকূল পরিবেশর উপর। এই সমস্ত পোকামাকড় মানুষের রোগের প্রধান বাহক। তাছাড়াও ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও অনুজীবদের প্যাটান পরিবর্তন ও প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলেও রোগের বিস্তার ঘটছে। যেমনঃ ম্যালেরিয়, ডেঙ্গু, কোভিড-১৯, যক্ষ্মা, এইচআইভি/এইডস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা।
ম্যালেরিয়াঃ ম্যালেরিয়া মশা দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রামক রোগ। ম্যালেরিয়ার বিস্তার তার বাহক প্লাজমোডিয়াম জীবাণু বহনকারী মশার ভৌগলিক পরিবেশে উপর নির্ভর করে। ম্যালেরিয়ার জীবানু বহনকারী মশার (অ্যানোফিলিস) জীবনকাল নির্ভর করে জলবায়ুর উপাদানের উপর যেমন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং বৃষ্টিপাত। সাধারণত গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে অ্যানোফিলিস মশা বেঁচে থাকতে পারে এবং সংখ্যাবৃদ্ধি করতে পারে। রেকর্ড সংখ্যক ম্যালিরিয়া জীবাণু বহনকারী মশা অ্যানোফিলিস এর বিস্তরণ দেখা যায় আফ্রিকা, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ওশেনিয়ায়। এই সমম্ত এলাকায় ১০০ টিরও বেশি দেশের অবস্থান যেখানে প্রায় ৩.৩ বিলিয়ন মানুষের বসবাস। বিপরীতে উচ্চ উচ্চতা ও ঠান্ডা অঞ্চলে ম্যালিরিয়ার প্রকোপ দেখা যায় না।
ডেঙ্গুঃ ডেঙ্গু ভাইরাস দ্বারা সংঘটিত জ্বর। এটি এডিস ইজিপ্টাই ধরণের মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা সাধারণত বিষুব রেখার ৩৫০ উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে এবং ১০০০ মিটার উচ্চতায় বাস করে। ডেঙ্গু মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ওশেনিয়ার গ্রীষ্মমন্ডলীয় এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলে দেখা যায়। বাংলাদেশে ও এর প্রকোপ খুব বেশি, সাধারণত বৃষ্টিপাতের সাথে এর সম্পর্কযুক্ত। বিপরীতে, সাধারণত উচ্চ উচ্চতায় ও ঠান্ডা ঋতু সময় এর প্রভাব দেখা যায় না। 

ইতিকথাঃ পরিবেশ, জলবায়ু, মানব রোগ-ব্যাধির প্রকোপ ও বিস্তার আন্তসম্পর্কযুক্ত। পাশাপাশি বিশ্বায়ন, প্রযুক্তির উন্নয়ন, ও মানুষের মোবিলিটি বিভিন্ন রোগের বিস্তারে ভূমিকা রাখছে ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাড়িয়ে দিচ্ছে। রোগ-ব্যাধির প্রকোপ ও বিস্তার রুধে পাবলিক হেলথ বিশেজ্ঞসহ সংশ্লিষ্টরা এই সমস্ত বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে ও করনীয় দিক নির্ধারণ করতে হবে। 


রেফারেন্সঃ 
Park, K. (n.d.). Park’s textbook of preventive and social medicine.
https://ourworldindata.org/malaria 
https://www.who.int/data/gho/data/themes/malaria 
https://roar.media/bangla/main/history/john-snow-and-his-cholera-map 
https://bn.wikipedia.org/wiki/স্বাস্থ্য-ভূগোল