শনিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২২

একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি কেন অংশ নেবেন সহশিক্ষা কার্যক্রমে!

লেখাটি শুরু করছি আমার প্রিয় একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের উক্তি দিয়ে, স্যার বলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসরুমের ভেতর একজন শিক্ষার্থী যেটুকু শিখে তার চেয়ে অনেক বেশি শেখে ক্লাসরুমের বাইরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ রয়েছে জ্ঞান চর্চার পাশাপাশি অবাধ বুদ্ধিচর্চার, সৃজনশীলতার, গবেষণার, উদ্ভাবন, মানবিক মূল্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আদর্শ নাগরিক হবার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর সে বিষয়টি এখন আমার কাছে আরো অনেক স্পষ্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সহপাঠি, সিনিয়র বা অনুজ একাডেমিক পরীক্ষায় ভাল ফলাফল করেছে বাস্তবজীবনে তারাই যে সফলতা লাভ করেছে তা কিন্ত পুরোপুরি সত্য নয়। আবার বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সহপাঠি, সিনিয়র বা অনুজ একাডেমিক পরীক্ষায় মোটামুটি ফলাফল করে এখন তারা অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানে সম্মানীয় পদে চাকুরী করছেন, নিজ নিজ জায়গায় সফল হয়েছেন ও নেতৃত্ব দিচ্ছেন।  তার পেছনের কারনটি হল ঐ শীক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিত।


শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলছি বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরের স্নাতক ও একবছরের স্নাতকোত্তরের সনদ যে ক্যারিয়ারের নিশ্চয়তা দেবে এমনটি না। পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম যেমন; বুদ্ধিচর্চা, প্রতিযোগিতা, গবেষণা কার্যক্রম, খেলাধুলা, প্রশিক্ষণ, সংগঠন ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে অংশ নিবেন। এই সহশিক্ষা কার্যক্রম আপনাকে সফলতা এনে দিতে সহযোগিতা করবে। বড় বড় প্রতিষ্ঠান শুধু পরীক্ষা বা ভাইবার মাধ্যমে জনবল নিয়োগ করে না। প্রার্থীকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানে বসিয়ে দেওয়া হয়। সেখানে দেখা যায় সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ভালো করে। সরকারি চাকুরি বা বিসিএস যাদের লক্ষ্য, তারা দ্বিতীয় বা তৃতীয় বর্ষ থেকে প্রস্ততি নিতে পারেন। তবে সেক্ষত্রেও সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ আপনাকে চাকুরির বাজারে এগিয়ে রাখবে। 

বিদেশে উচ্চশিক্ষা নেওয়া যাদের লক্ষ্য তারা পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত থাকা। প্রস্ততি নিতে হবে আইইএলটিএস, জিআরই এবং টোয়েফলের জন্য। স্কলারশীপ ম্যানেজ করার জন্য ভিনদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ধৈর্য ধরে মেইল করতে হবে। কারণ অনেক অধ্যাপককে মেইল করলে রিপ্লাই দেয় না। অভিজ্ঞতায় দেখেছি ভালো স্কলারশীপ পাবার অন্যতম একটি শর্ত থাকে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের অভিজ্ঞতা। যে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে তাদের স্কলারশীপ পাবার সম্ভাবনা তত বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের সংগঠন রয়েছে। স্বেচ্ছাসেবা সংগঠন, ব্লাড ব্যাংক, বিতর্ক সংগঠন, পাঠক ফোরাম, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, বিজ্ঞান ক্লাব, সাংস্কৃতিক সংগঠন, অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন, ইত্যাদি। এই সমস্ত সংগঠনের সাথে সংযুক্ত হলে মেলা মেশার দক্ষতা বাড়ে, নেতৃত্ব দেবার দক্ষতা বাড়ে, আন্ত যোগাযোগ সম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। যা ভবিষৎ জীবনে খুব কাজে লাগে। এরিস্টটল বলেছেন, ‘‘সংগঠন মানুষের নেতিবাচকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে সহযোগিতা করে। হতাশা ও দুঃখবোধ থেকে বেড়িয়ে আসতেও সাহায্য করে। চলার পথে একে অন্যকে সহযোগিতা করার মানসিকতা তৈরী করে”। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করার পরিবেশও তৈরি করে সংগঠন। তাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তার চিরচেনা গণ্ডির বাইরে গিয়ে আরো অনেক মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ক্ষেত্র তৈরী হয়। এতে করে তার বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কগুলো জীবনের কোন না কোন সময় কাজে লাগে। 

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একজন শিক্ষার্থীকে একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি এমন একটি জগতের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয় যেখান থেকে সমাজকে পাঠ করার প্রত্যক্ষ ও যুগোপযোগী পথটা সে পেয়ে যায়। টিমওয়ার্কে কাজ করতে গিয়ে তার মধ্যে সহিষ্ণুতার গুণও তৈরি হয়। যেটি তার কর্ম জীবন ও পারিবারিক জীবনে কাজে লাগে। কথায় আছে “জীবনের জন্য শিক্ষা আর জীবিকার জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ”। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অবস্থায় দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ নিতে পারলে নিজেকে এগিয়ে রাখা যায়। বিশেষ করে কার্যক্রর যোগাযোগ দক্ষতা, আইটি দক্ষতা, উপস্থাপন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ। তাছাড়া চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির যুগে উৎপাদন পদ্ধতি ও কার্য প্রণালী যন্ত্র নির্ভর। এই জটিল প্রকৃতির কার্য প্রণালীতে দক্ষ কর্মীর বিকল্প নেই। তাই ছাত্র অবস্থায় একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি নেতৃত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধি বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে, নিজেকে এগিয়ে রাখার জন্য। যুবদের প্রশিক্ষণ দেবার জন্য সরকারের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও বেসরকারি বিভিন্ন সুযোগ রয়েছে যেখানে বিনামূল্যে এ প্রশিক্ষণ ও সুবিধা প্রদান করা হয়। 

পরিশেষে নির্দ্বিধায় বলা চলে এককজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর একাডেমিক পড়ালেখার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্ক্রমে অংশগ্রহণ খুবই প্রয়োজনীয় ও তাৎপর্যপূর্ণ। এবং বিশ্ববিদ্যালয়কে এই সমস্ত সুযোগ-সুবিধা সাথে শিক্ষার্থীদের পরিছয় করিয়ে দিতে ভূমিকা রাখতে হবে।