বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩

হেলথ বিলিভ মডেলঃ ভবিষৎ করোনা সংক্রমণকে প্রতিহত করতে অধিক কার্যকর

স্বাস্থ্য বলতে শুধু রোগ বা অসুখের অনুপস্থিতি বোঝায় না, স্বাস্থ্য বলতে শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সামাজিকভাবে ভালো থাকাকে বোঝায়। সুস্বাস্থ্যের জন্য ব্যক্তির আচরণ, মানসিকতা ও পরিবেশ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। হেলথ বিলিভ মডেল অনুসারে মানুষের স্বাস্থ্যের অবস্থা তার  ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আচরণবিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত। এই ধারনা বা মতবাদ কে হেলথ বিলিভ মডেল বলা হয়। মানুষের আচরণগত স্বাস্থ্য তত্ত্বগুলির মধ্যে হেলথ বিলিভ মডেল বা স্বাস্থ্য বিশ্বাস মডেল (HBM) অন্যতম।  হেলথ বিলিভ মডেল মতে মানুষের স্বাস্থ্য প্রোগ্রাম/কর্মসূচী ডিজাইন করা উচিত মানুষের জীবনধারা, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধকে অনুসরন করে বা সেগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে।

হেলথ বিলিভ মডেল ধারনাটি প্রথম মানুষের সামনে নিয়ে আসেন মার্কিন সামাজিক মনোবৈজ্ঞানিকদের একটি দল ১৯৫০ সালে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে কারণ খুজতে গিয়েছিলেন কেন এত কম লোক বিনামূল্যে যক্ষ্মা স্ক্রীনিং প্রোগ্রামে রেসপন্স করল। পরবর্তীতে তারা দেখল যক্ষ্মা স্ক্রীনিং প্রোগ্রামটি স্থানীয় জনগোষ্ঠির বিশ্বাসে ও আচরণে সাথে বৈরী ছিল। পরবর্তীতে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা একটি মতে পৌছল যে, স্বাস্থ্য পরিষেবা মানুষের জ্ঞান, মতামত, অবস্থান, পরিবেশ, কর্ম, আচরণবিধি ও সংস্কৃতিকে পর্যালোচনা করে নির্ণয় ও পরিকল্পনা করা উচিত যাতে কাংখিত লক্ষে পৌছানো যায়। আর এটাই  হেলথ বিলিভ মডেলেরে মুল লক্ষ্য।

আমাদের নিশ্চয়ই মনে আছে সিপাহী বিপ্লবের। কেউ কেউ একে মহাবিদ্রোহ বলে থাকেন। মহাবিদ্রোহ ১৮৫৭ কে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা আন্দোলন রূপে গণ্য করা হয়। আর এই সিপাহী বিপ্লবের অন্যতম কারণ ছিল ৫৫৭ ক্যালিবার এনফিল্ড (পি/৫৩) রাইফেল এর কার্তুজ। রাইফেল গুলোর কার্তুজ গরু ও শুকরের চর্বি দিয়ে তৈরী হতো। সৈন্যরা তাদের রাইফেলের কার্তুজ লোড করার সময় তা দাঁত দিয়ে খুলে লাগাতে হতো। গরু ও শুকরের চর্বি মুখে দেয়া হিন্দু-মুসলিম সৈন্যদের জন্য অধার্মিক ও গর্হিত কাজ। ফলশ্রুতিতে, ১৮৫৭ সালের ফেব্রুয়ারীতে সিপাহীরা (ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ভারতীয় সৈন্য) নতুন কার্তুজ ব্যবহার করতে অস্বীকার করেছিল। যার ফলে ব্রিটিশ শোসকগোষ্ঠীকে চরম মূল্য দিতে হয়েছিল।

আমরা যদি লক্ষ্য করি কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচীতে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে জনগণের যে পরিমাণে আগ্রহ ও অংশগ্রহণ ছিল, তৃতীয় ডোজ বা বোস্টারে সে পরিমাণে আগ্রহ নেই। তার অন্যতম কারণ হিসেবে বলা যায়, করোনা প্রতিরোধে মানুষের মানসিক শক্তি ও সাহস বেড়েছে, সংক্রামণের হার কমেছে। অন্যদিকে বলা যায় তৃতীয় ডোজ বা চতুর্থ ডোজের প্রচার ও কার্যকারীতে নিয়ে সংলাপ কমে গেছে। যার ফলে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে সে ভবিষৎ করোনা সংক্রমণকে প্রতিহত করতে পারবে।

কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম ডোজ নেওয়ার তিন মাস পর ভাইরাসটির বিরুদ্ধে টিকার কার্যকারিতা কমতে শুরু করে। দ্বিতীয় ডোজের কার্যকারিতা  ছয় মাস। কিন্তু ছয় মাস পর করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় আগের চেয়ে ১৫ গুণ। এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। গবেষণায় দেখা গেছে, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পর শরীরে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, বুস্টার ডোজ নিলে তৈরি হয় তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে  বিশেষজ্ঞরা বুস্টার ডোজ এর ব্যাপারে বিশেষ জোর দিচ্ছেন। তাই হেলথ বিলিভ মডেল অনুসারে অবস্থার উন্নতিতে আমরা বেশ কিছু প্রোগ্রাম ও কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে পারি যার ফলে মানুষের মধ্যে বোস্টার ডোজের ব্যাপরে আগ্রহ তৈরী হবে। এবং কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি কমে আসবে।

হেলথ বিলিভ মডেল মতে মানুষের স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত আচরণের দুটি উপাদান রয়েছে। স্বাস্থ্য আচরণ মডেলের দুটি উপাদান হল:

  • অসুস্থ হলে সুস্থ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা;
  • স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে অসুস্থতা থেকে মুক্তি ও রোগ প্রতিরোধ করা যায় এটা বিশ্বাস করা;

যেমন; নিয়মিত স্বাস্থ্যকর/পুষ্টিকর খাবার , ব্যায়াম ও অ্যালকোহল সেবন না করার মাধ্যমে অসুস্থতা থেকে মুক্তি ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। যার ফলে সুস্থ থাকা যায় এটি বিশ্বাস করা ও মান্য করা। এবং কোভিড-১৯ এর ঝুঁকি কমিয়ে আনতে বোস্টার ডোজ গ্রহণ।  বোস্টার ডোজ এর কার্যকারীতা, ফলাফল ও অপরিহার্যতা সেটি জনগণের কাছে তুলে ধরা।