বৃহস্পতিবার, ২০ জুলাই, ২০১৭

তথ্য সচেতন যুব সমাজ গঠনে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ও ভূমিকা

বাংলাদেশ সহ সারা বিশে^ সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বিশ^জুড়ে নানাদেশে বিভিন্ন মত-পথ প্রচার প্রকাশ, সচেতনতা ও একত্রিত করা, তথ্য প্রচার করা, পণ্যের বিপণন করা, এমনকি প্রতিবাদ আন্দোলন সংগঠিত করার ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া একটি বড় প্লাটফর্ম হয়ে দাড়িয়েছে। বাংলাদেশে স্মার্ট ফোন ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে বেড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার বহুবিধ ব্যবহার। সোশ্যাল মিডিয়া এখন মুলধারার গণমাধ্যমের সমান্তরাল এবং বিকল্প হিসেবে কাজ করেছে। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের ফলে উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাঠ পর্যায়ের কৌশল বাস্তবায়নে এক নতুন ধারা সৃষ্টি হয়েছে। স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বপ্রণোদিত হয়ে বিবেকের তাড়নায় কিংবা সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কিছু সৃষ্টিশীল মানুষ, উদ্যমী যুবক, ইতিবাচক নেতৃত্ব ও পরিবর্তনের দূতরা তুলে ধরছে সমাজ উন্নয়নের সফলতা, সুযোগ ও ক্ষেত্র-সমূহ। এবং ব্যাপক ভাবে প্রচার করছে ব্যক্তি, দল ও সমাজের উত্তম চর্চা সমূহ। এই চর্চা সমাজ পরিবর্তনে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে যার ফলে কমিউনিটিতে সম্প্রতি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে এবং যুবরা তথ্য সচেতন ও কর্মদক্ষ হয়ে গড়ে ওঠার ক্ষেত্র তৈরী হচ্ছে।

সোশ্যাল মিডিয়া কি?
সহজ ভাষায় সোশ্যাল মিডিয়াকে বলা যেতে পারে একটি ইন্টারনেট নির্ভর যোগাযোগের মাধ্যম যা আইসিটি উপকরণ ব্যবহার করে থাকে এবং এর দ্বারা এক বা একের অধিক মানুষের সাথে খুব সহজেই এবং খুব কম খরচেই তথ্য বিনিময় করা যায়। গতানুগতিক মাধ্যমের মতই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে দূর দুরান্তের খবর সংগ্রহ এবং বিনিময় করা যায়। খুব সহজেই বিপুল সংখ্যক বন্ধু বা দর্শকের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে কোন বিষয়ে মতামত গ্রহণ বা জনমত তৈরী করা যায়। কিন্তু গতানুগতিক মাধ্যমের সাথে এর পার্থক্য এই যে বিশ্বব্যাপী বা আঞ্চলিক সোশ্যাল মিডিয়ায় সহজেই যে কোন যোগাযোগ, মতবিনিময় বা আলোচনা তাৎক্ষনিক করা যায় । 

সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় সাইট গুলো হচ্ছে ফেইস বুক (Facebook), ইউ টিউব (YouTube), টুইটার (Twitter), গুগোল প্লাস (Google+), লিঙ্কড ইন (LinkedIn)  এবং ইন্সটাগ্রাম (Instagram)

সামাজিক মাধ্যম এখন সাধারণ মানুষের ব্যবহারের বাইরেও আরও বিভিন্ন মহলে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যেমন সরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং বেসরকারি সংস্থা। বন্ধু ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখা থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের ভেতর যোগাযোগের ক্ষেত্রে, তৃণমূল পর্যায়ে সুশীল সমাজের সচেতনতামুলক কার্যক্রম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এবং ব্যবসায়ীদের পণ্য প্রচারের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম খুব কার্যকর ভুমিকা রেখে যাচ্ছে। 


তথ্য সচেতন যুব সমাজ গঠনে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার ও ভূমিকাঃ
যুবরাই সোশ্যাল মিডিয়া বেশি ব্যবহার করে থাকেন। পরিসংখ্যান মতে ১৮-৩৫ বয়সের প্রায়ই ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করছে। এবং এই তথ্য শহর টু গ্রামে ভিন্ন হতে পারে। তবে এই কথা সত্য যে, বাংলাদেশে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে সিংহভাগ জনগোষ্ঠি যুবক শ্রেণী। যুবদের তথ্য সচেতন, কর্ম-দক্ষ, আত্ম-বিশ^াসী, দেশপ্রেমী ও রাজনৈতিক সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার ও ভূমিকা রয়েছে। এখন প্রায় সব সরকারি প্রতিষ্ঠান, অসরকারি প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং স্বায়িত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান সবারই সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ রয়েছে। অনেকক্ষেত্রে প্রকল্প ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়ার পেইজ রয়েছে। আর এই সমস্ত পেইজে  যুবদের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আপডেট দেওয়া হয়। যেমন; যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ফেইসবুকে পেইজে যুবদের দক্ষতা বৃদ্ধিও প্রশিক্ষণ বিষয়গুলো আপডেট দেওয়া হয়। একইভাবে জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের ফেইসবুক পেইজে সঠিক শ্রম অভিবাসনের তথ্যগুলো শেয়ার করা হয়। এবং আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক অধিদপ্তরের ফেইসবুক পেইজে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নাগরিকদের করনীয় দিক সমূহ শেয়ার করা হয়। বিভিন্ন এনজিও ও তাদের পরিচালিত কর্মকান্ডে সর্ম্পকে মতামত ও মূল্যায়ন করতে সোশ্যাল মিডিয়া মতামত সংগ্রহ ও ভার্চুয়াল কনফারেন্স এর আয়োজন করে থাকে। বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস এর সোশ্যাল মিডিয়া পেইজে চাকুরীর ও পেশাগত উন্নয়ন এর তথ্য, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পেইজে আর্থিক সুবিধা ও উদ্যেত্তা হবার তথ্য শেয়ার করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর পেইজে বৃত্তি, উচ্চ শিক্ষার তথ্য প্রকাশ করা হয়। 

শিক্ষাক্ষেত্রে বহুল ব্যবহ্যত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার ঠিকানাঃ
www.youtube.com
www.youthopportunities.org

চাকুরী লাভ ও পেশাগত উন্নয়নে বহুল ব্যবহ্যত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ার ঠিকানাঃ
www.bdjobs.com
www.youthop.com
www.bpsc.gov.bd
www.unv.org

আউটসোসিং কাজের জন্য মার্কেট প্লেসঃ

আর এই সমস্ত খবরা-খবর ও তথ্য আদান প্রদান অধিক মানুষের সাথে খুব সহজেই এবং খুব কম খরচেই করা যায়।  এই ক্ষেত্রে আমাদের করনীয় হবে ঐ সমস্ত প্রান্তিক যুব গোষ্ঠিকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ-অধিদপ্তর, মার্কেটপ্লেস গুলোর সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ সর্ম্পকে যুবদের অবহিত করা ও সংযোগ তৈরী করিয়ে দেওয়া। এই ক্ষেত্রে সমাজ উন্নয়ন সংস্থাগুলো অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে পারে। যেমন: সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহারকে সহজ ও প্রবেশগম্য করার জন্য কর্মসূচী হাতে নেওয়া, প্রয়োজনীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সোশ্যাল মিডিয়া পেইজের লিংক সংগ্রহ করে তা যুব সমাজের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া। এলাকা ভিত্তিক, বিষয় ভিত্তিক সোশ্যাল মিডিয়া পেইজ তৈরী করে সেখানে বিভিন্ন সোশ্যাল গ্রাফিকস প্রকাশ করে বিষয় ভিত্তিক সচেতনতা তৈরী করা। 

কিন্তু কোন কিছু যতোই জনপ্রিয় হোক না কেন,তার কিছু নেগেটিভ দিক তো থাকবেই! এবং সে ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীরা সতর্ক থাকতে হয়। একইভাবে দক্ষ ও তথ্য সচেতন যুব সমাজ গঠনে যুবদের অধিক সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। যেমন-সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তি, দল, রাস্ট্র সর্ম্পকে উদ্দেশ্যমুলক ভাবে মিথ্যা, অশ্লীল অথবা মানহানিকর তথ্য প্রকাশ করা থেতে বিরত থাকা ও সর্তক হওয়া। তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া আর্শীবাদী নিয়ামক হিসেবে একটি তথ্য সমৃদ্ধ, দক্ষ যুব সম্প্রদায় গঠনে কার্যক্রর ভূমিকা পালন করবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল সবাই উপভোগ করবে।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন