স্থানীয় ও বৈশি^ক উন্নয়ন তথা টেকসই উন্নয়নে প্রবাসীরা ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন। জাতিসংঘের তথ্যানুসারে, ২০১৭ সালে অভিবাসীরা তাদের নিজ নিজ দেশে ৫৯৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন। আর এই অর্থে পরিমাণ হচ্ছে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত উন্নয়ন সহায়তার তিনগুন বেশি। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রেকে দারিদ্রসীমার ওপরে উঠাতে প্রবাসীরা ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অভিবাসীরা ১৫.৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পাঠিয়েছেন, যা আমাদের বৈদিশিক রির্জাভ এর ৬৬ শতাংশ।
প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের পরিমান এখন তৈরী পোশাক খাত থেকে আয়কৃত অর্থের সম-পরিমান বা তারও বেশি। সর্বোপরি বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখছে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ বা রেমিট্যান্স। ধারনা করা হয় বৈধ পথে এই প্রেরিত অর্থের ছেয়ে হুন্ডি বা অবৈধভাবে আসছে তার সমপরিমাণ অর্থ। গবেষণায় দেখা যায় প্রবাসীরা তাদের উপার্জনের ২০-৩০ শতাংশ নিজ দেশ পাঠিয়ে দেন। আর নারী অভিবাসীরা তাদের উর্পাজনের ৬০-৮০ শতাংশ নিজ দেশ পাঠিয়ে দেন। অথচ পুরুষের তুলনায় নারী শ্রমিকের আয় কম। বৈশি^কভাবে পৃথিবীর ৪৮ শতাংশ অভিবাসী শ্রমিক হল নারী। নারী অভিবাসীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি হয়রানি ও কঠোর শ্রমনীতির মুখোমুখি হন । বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তোরণ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে উঠে আসবে প্রথিবীর ১৬২ দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের নীরব অবদানের কথা। যাদের একনিষ্ঠ শ্রম, মেধা, ত্যাগ ও ভালবাসার মাধ্যমে দেশ মাতৃকা, পরিবার, সংসার ও প্রিয়জন ছেড়ে প্রবাসে কাজ করছেন আর পরিবারের জন্য রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। সাদা চোখে, প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ দিয়ে তাদের সংসার চলছে, তার পরিবারের সদস্যদের ভরন পোষন হচ্ছে। আর একটু গভীর ভাবে ভেবে দেখলে দেশের দ্রারিদ্যতা কমছে (এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা-০১), বেকার যুবকদের উন্নত কর্ম-সংস্থান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে (এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা-০৮), কর্ম-সংস্থান এর সুযোগ এর ফলে সমাজে অস্থিরতা, উগ্রবাদ, সন্ত্রাস কমছে (এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা-১৬) যা কিনা বৈশি^ক টেকসই উন্নয়নে সরাসরি অবদান রাখছে। যেসব, প্রবাসীরা দেশে ফেরত আসছেন তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও টেকনোলজির পারদর্শিতা উন্নত বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখছে। যদিও ফেরত আসা প্রবাসীদের সঠিক ডাটবেজ নেই, তবে সে ক্ষেত্রে আমাদের মনোনিবেশ করা উচিত কিভাবে ফেরত আসা অভিবাসীদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও টেকনোলজির পারদর্শিতাকে কাজে লাগানো যায়। মাইগ্রেশান একটি বৈশি^ক বিষয় গত এক দশকে প্রায় ১০০ মিলিয়ন অভিবাসীস যোগ হয়েছে বৈশি^ক অভিবাসীর সংখ্যায় যার বর্তমান সংখ্যা প্রায় ২৫০ মিলিয়ন (অভিবাসী বৃদ্ধি হার বৈশি^ভাবে ৩.৪%)। ঝুকিঁপূর্ণে রুটে মাইগ্রেশন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত অসংখ্য অভিবাসী প্রাণ হারাচ্ছে, শুধুমাত্র ২০১৪-২০১৫ বছরে প্রায় ১০,৪০০ অভিবাসী মৃত্যুবরণ করে। সম্প্রতী বাংলাদেশী অভিবাসীদের ভূমধ্য সাগরে সলিল সমাধি তারই প্রমাণ।
সর্বোপরি পৃথিবীর সামগ্রিক উন্নয়নে অভিবাসীদের অবদানকে স্বিকার করতে হবে। তাদের অধিকার ও স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। উন্নত বিশ^কে বুঝতে হবে তাদের এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্বাছন্দ্য জীবনের পিছনে রয়েছে উন্নয়নশীল দেশ থেকে আগত অভিবাসীরা আত্মত্যাগ ও অসামান্য অবদান। আর উন্নয়নশীল দেশকে উপলব্দি করতে হবে তার দেশের প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ স্থানিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে ও টেকসই উন্নয়নে অবদান রেখে চলছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন