ভূমিকা
বর্তমান
বিশ্বে দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে
বায়ু দূষণ একটি গুরুতর
পরিবেশগত চ্যালেঞ্জে পরিণত হয়েছে। বায়ু দূষণ শুধু
মানবস্বাস্থ্য নয়, বরং পরিবেশ
ও জলবায়ুর ওপরও নেতিবাচক প্রভাব
ফেলে। আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এখন রিমোট
সেনসিং ডাটা ও ভূ-তথ্য ব্যবস্থা (GIS) ব্যবহার
করে বায়ুর গুণমান পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করা
সম্ভব হচ্ছে, যা পরিবেশ ব্যবস্থাপনায়
নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
গবেষণার
উদ্দেশ্য
এই গবেষণার উদ্দেশ্য হলো রিমোট সেনসিং
ডাটা ব্যবহার করে চট্টগ্রাম জেলার
বায়ুর গুণমান মূল্যায়ন করা এবং দূষণের
স্থানিক বন্টন বিশ্লেষণ করা।
ব্যবহৃত
উপাত্ত ও পদ্ধতি
গবেষণায়
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ESA) Sentinel-5P
স্যাটেলাইট ডাটা ব্যবহার করা
হয়েছে। এই ডাটাসেটের মাধ্যমে
বায়ুতে উপস্থিত প্রধান দূষক গ্যাস যেমন—
Nitrogen Dioxide (NO₂), Sulphur Dioxide (SO₂), Carbon Monoxide
(CO), Ozone (O₃) এবং
Methane (CH₄) এর
ঘনত্ব পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। GIS সফটওয়্যারের
মাধ্যমে ডাটা প্রক্রিয়াজাত করে
দূষণ ঘনত্বের মানচিত্র (concentration map)
তৈরি করা হয়, যা
স্থানিক বিশ্লেষণে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। এই গবেষণায় স্যাটেলাইট ডাটা বিশ্লেষণে গুগল আর্থ ইঞ্জিন ব্যবহার
করা হয়েছে, GIS সফটওয়্যার
হিসেবে QGIS ব্যবহার করা হয়েছে।
ফলাফল ও
বিশ্লেষণ
বিশ্লেষণে দেখা
যায়, চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদীর উভয় তীরে দূষণমাত্রা সর্বাধিক। বিশেষ করে NO₂, SO₂, CO, O₃, CH₄ গ্যাসের ঘনত্ব অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায়
বেশি। এর প্রধান কারণ হলো—
- নদীর দুই তীরে অবস্থিত শিল্প ও বন্দর
কার্যক্রম
- যানবাহনের অতিরিক্ত ধোঁয়া
- জ্বালানি দহন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা
|
দূষক |
গড় |
সর্বনিম্ন |
সর্বোচ্চ |
ইউনিট |
|
NO2 |
0.000082866249 |
0.000065471010 |
0.000147387586 |
mol/m² |
|
CO |
0.040605023899 |
0.039097371307 |
0.042212521519 |
mol/m² |
|
SO2 |
0.000098951528 |
-0.000001938400 |
0.000233547999 |
mol/m² |
|
O3 |
0.121208951909 |
0.120944346991 |
0.121497209628 |
mol/m² |
|
CH4 |
1932.011633627 |
1909.113017178 |
1960.349978183 |
ppb |
দূষক গ্যাসগুলোর
প্রভাব
|
দূষক গ্যাস |
স্বাস্থ্যের
প্রভাব |
পরিবেশগত
প্রভাব |
|
NO₂ |
শ্বাসযন্ত্রের
প্রদাহ, হাঁপানি বৃদ্ধি |
অ্যাসিড বৃষ্টি
সৃষ্টি করে |
|
SO₂ |
চোখ ও গলায়
জ্বালা, ফুসফুস ক্ষতি |
উদ্ভিদের ক্ষতি,
এসিড বৃষ্টি |
|
CO |
রক্তে অক্সিজেনের
ঘাটতি, মাথাব্যথা |
পরিবেশে গ্যাসীয়
দূষণ বৃদ্ধি |
|
O₃ |
ফুসফুসের কোষ
ক্ষতি |
কৃষি উৎপাদনে
নেতিবাচক প্রভাব |
|
CH₄ |
জলবায়ু পরিবর্তনে
ভূমিকা রাখে |
গ্রিনহাউস
প্রভাব বৃদ্ধি করে |
করণীয় ও
সুপারিশ
বায়ু দূষণ হ্রাসে
নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন—
- শিল্প কারখানায় আধুনিক ফিল্টার ও
স্ক্রাবার প্রযুক্তি ব্যবহার।
- পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও বৈদ্যুতিক
যানবাহনের প্রচলন।
- সবুজ বেষ্টনী ও বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
বাস্তবায়ন।
- নিয়মিত বায়ু গুণমান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র
স্থাপন।
- জনগণকে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পরিবেশবান্ধব আচরণে উৎসাহিত করা।
নগর পরিকল্পনা
প্রণয়নের সময় বায়ু দূষণ তথ্য ও স্থানিক বিশ্লেষণকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত।
- উচ্চ দূষণপ্রবণ এলাকায় নতুন শিল্প
স্থাপন সীমিত করা।
- নগর এলাকায় পর্যাপ্ত খোলা স্থান
ও সবুজ অঞ্চল সংরক্ষণ।
- পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব টেকসই
নগর নীতি প্রণয়ন।
- GIS ভিত্তিক দূষণ মানচিত্র নগর পরিকল্পনার ডাটাবেজে সংযুক্ত করা।
উপসংহার
Sentinel-5P স্যাটেলাইট ডাটা ও GIS বিশ্লেষণ ব্যবহার করে বায়ু দূষণের স্থানিক ধরন চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে। চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী অঞ্চলগুলোতে উচ্চমাত্রার দূষণ ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। তাই তথ্যভিত্তিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তি নির্ভর দূষণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে টেকসই নগরায়ন নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।


কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন