যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) ১৯৬১ সাল থেকে বৈশ্বিক উন্নয়ন, দারিদ্র্যতা হ্রাস, গণতন্ত্রের বিকাশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, মানবাধিকার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছিল। বিশ্বের নানা দেশে বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের পথে ইউএসএআইডি একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার হিসেবে কাজ করছিল। মার্কিন সরকারে রাস্ট্রীয় ঘোষণায় গত ০১ জুলাই ২০২৫ (USAID) আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। গত জানুয়ারী থেকে, ট্রাম্প প্রশাসন মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (USAID) কে পদ্ধতিগতভাবে ভেঙে দিয়েছে, হাজার হাজার চুক্তি বাতিল করেছে, বিদেশে হাজার হাজার কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। বাংলাদেশেও ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়েছে (বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম ছাড়া), প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট জনবল চাকুরী হারিয়েছে (বাংলাদেশে এর সংখ্যা প্রায় ৫০,০০০)। ফেব্রুয়ারির শুরুতে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছেন যে USAID যে লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছিল, সেই লক্ষ্য থেকে ইউএসএআইডি অনেক আগেই সরে গেছে এবং অভিযোগ উঠেছে এর তহবিল মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়েছে”। যার ফলে এই আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাটি গত ০১ জুলাই বন্ধ হয়ে গেছে।
ইউএসএআইডি বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে টেকসই উন্নয়নে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে আসছে। এই সংস্থার অর্থায়নে আফ্রিকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সুপেয় পানি ও পুষ্টিকর খাদ্য, লাতিন আমেরিকায় উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা, দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্যোগ প্রস্তুতি ও জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়ে আসছিল।
বাংলাদেশের উন্নয়নে ইউএসএআইডির অবদান অনস্বীকার্য। স্বাধীনতার পর থেকেই ইউএসএআইডির আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় এদেশে বহুমুখী উন্নয়ন ঘটেছে। যেমন: স্বাস্থ্য খাতে মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা; সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার সুযোগ তৈরি; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বহুমুখী প্রস্তুতি ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা; নারীর ক্ষমতায়ন ও মানবাধিকার রক্ষায় গ্রামীণ নারীদের প্রশিক্ষণ ও অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি; গণতন্ত্র ও সুশাসন, স্থানীয় সরকার জবাবদিহিকরণ, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং নাগরিক সমাজকে সক্রিয় করা মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত । বিশেষ করে, এনজিও ও সুশীল সমাজের সঙ্গে কাজ করে ইউএসএআইডি গণতান্ত্রিক চর্চা ও উন্নয়নকে বেগবান করেছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেজ্ঞরা মনে করছেন, ইউএসএআইডির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৈশ্বিকভাবে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। মানবিক সহায়তা বা বরাদ্ধ কমে যাবে, দুর্যোগ-প্রবণ অঞ্চলে সাড়া দেওয়ার সক্ষমতা হ্রাস পাবে, এবং অনেক দেশে গরিব মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যখাত, স্থানীয় উন্নয়ন, দুর্যোগ প্রস্তুতি এবং নাগরিক ক্ষমতায়নে যে সহায়তা আসতো তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সর্বোপরি, ইউএসএআইডি শুধুই একটি দাতা সংস্থা নয়, এটি ছিল বিশ্ব মানবতার এক শক্তিশালী হাত। এই সংকট উত্তরণে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্মিলিত পদক্ষেপ, বিকল্প উন্নয়ন অংশীদার খোঁজা এবং স্থানীয় সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের উন্নয়নে কিভাবে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে পারে, তার উপায় খোঁজা। একইসাথে, বাংলাদেশ সরকার ও এনজিওগুলোর উচিত ইউএসএআইডির বিকল্প উৎস খুঁজে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন