শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনঃ প্রবালের জীবন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গঠন, গুরুত্ব ও সংরক্ষণে করণীয়

পৃথিবীর তিনভাগ জল আর একভাগ স্থল। পৃথিবী সৃষ্টির রহস্য লুকিয়ে আছে সমুদ্রে। সমুদ্রে কত প্রজাতির প্রাণি আছে তার সঠিক তথ্য বিজ্ঞানীরা এখনো সঠিকভাবে বলতে পারেনি। ভবিষ্যতে হয়তো জানা যাবে। মনে করা হয়, সমুদ্রের মাত্র এক-দুই শতাংশ প্রাণীকুল সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। সমুদ্রে যত প্রাণী রয়েছে তার মধ্যে প্রবাল (Coral) এক বিষ্ময়কর প্রাণী। প্রাথমিক দৃষ্টিতে প্রবালকে জড়বস্ত মনে হলেও আসলে এরা জীবন্ত সামুদ্রিক প্রাণী। অন্যান্য স্বাভাবিক প্রাণীর ন্যায় এরা খাবার গ্রহণ করে, বংশবিস্তার করে কিন্ত চলাফেরা করতে পারে না। সাগরতলে এক জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে সরাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। প্রাণীজগতে এদের স্থান অ্যান্থোজোয়া শ্রেণীতে, এরা অমেরুদন্ডী এবং অনেকগুলো প্রজাতি আছে।

এক একটা প্রবাল-প্রাণীকে বলা হয় পলিপ। এই পলিপগুলো সাধারণত আকারে খুবই ছোটো (মাত্র ১/২ মিলিমিটার লম্বা)। এরকম হাজার হাজার প্রবাল-পলিপ সমুদ্রের নিচে কলোনি বানিয়ে একসাথে বাস করে। এই কলোনি থেকেই গড়ে ওঠে প্রবাল প্রাচীর ও প্রবাল দ্বীপ। ধারনা করা হয়, বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বিপ সেন্ট মার্টিন এভাবে গড়ে ওঠেছে। প্রবালের পলিপ নিজের দেহের ওপর ক্যালসিয়াম কার্বোনেট দিয়ে এক বিশেষ খোলস তৈরি করে। একই কলোনির হাজার হাজার পলিপের খোলস পরস্পর জুড়ে গিয়ে ক্রমশ একটা বড়ো কাঠামো গড়ে ওঠে। সেই কাঠামোর ওপরে প্রবাল-পলিপরা মারা যাওয়ার পর সেখানে বেড়ে ওঠে নতুন পলিপদের কলোনি। এই ভাবে শত শত বছর ধরে একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে সমুদ্রের নিচে রূপ নেয় প্রবাল প্রাচীর (Coral Reef)। প্রবাল প্রাচীরগুলো দেখতে অপূর্ব সুন্দর। এগুলো বাদামি, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালি, ইত্যাদি নানান রঙে রঙানো থাকে। প্রবালে বসবাসকারী অ্যালজি, স্পঞ্জ ও অন্যান্য জীবরা এতে নানান উপাদান যোগ করে এর বর্ণবৈচিত্রকে আরো বাড়িয়ে তোলে।

প্রবালের খাওয়াদাওয়া, বংশবিস্তার সব কিছুই অদ্ভুত। প্রবাল প্রাণী, তাই তারা উদ্ভিদের মতো নিজেদের খাবার নিজেরা তৈরি করতে পারে না। প্রবালের পলিপগুলো তাদের ছোট ছোট হাত টেন্টাকেলের মাধ্যমে সাগরের জলে ভেসে আসা অতিক্ষুদ্র প্রাণী-প্ল্যাঙ্কটন শিকার করে খায়। সাধারণত রাতের বেলায় এরা এইভাবে শিকার করে খাবর খায়। তবে এইভাবে পলিপগুলো তাদের পুষ্টি চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করে। এদের পুষ্টির বেশিরভাগটা আসে এদের দেহকলায় আশ্রয় নেওয়া অতিসূক্ষ্ম অ্যালজিদের (Zooxanthellae) কাছ থেকে। অ্যালজিদের সাথে প্রবালের বন্ধুত্ব অতি ঘনিষ্ঠ। অ্যালজিরা প্রবাল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নিয়ে সূর্যের আলো ব্যবহার করে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার খাবার তৈরি করে। এই তৈরি খাবারের ভাগ পায় প্রবাল। অ্যালজিরা খাবার তৈরির সময় অক্সিজেন ও জৈব উপাদান উৎপাদন করে যা প্রবাল খাবার হিসেবে গ্রহণ করে। এই প্রক্রিয়াকে সিমবায়োটিক পদ্ধতি বলে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে এই ক্ষুদ্র প্রাণী প্রবাল কোটি কোটি বছর টিকে আছে।  এছাড়াও প্রবাল সাগরের জল থেকে অজৈব ক্যালসিয়াম, নাইট্রোজন, ফসফরাস, ইত্যাদি শোষণ করে কাজে লাগাতে পারে। অ্যালজিরা প্রবালের রং নির্ণয়েও  ভূমিকা রাখে।

প্রবালের প্রজনন বা বংশবিস্তারঃ

প্রবাল সাধারণত দুইভাবে প্রজনন ও বংশবিস্তার করে যেমন; অযৌন এবং যৌনভাবে। অযৌন প্রজননে, নতুন ক্লোনাল পলিপগুলি পিতামাতার পলিপ থেকে অঙ্কুরিত হয় এবং নতুন উপনিবেশ তৈরি করে। এটি ঘটে যখন পিতামাতার পলিপ একটি নির্দিষ্ট আকারে পৌঁছায় এবং বিভক্ত হয়। এই প্রক্রিয়াটি প্রবালের জীবন জুড়ে চলতে থাকে। যৌন জননের ক্ষেত্রে অন্তঃনিষেক ও বহিঃনিষেক, দুই-ই হয়ে থাকে। বহিঃনিষেকের জন্য প্রবালের পছন্দ বসন্তকাল। এই সময় পূর্ণিমা থেকে পরপর ক’দিন, জোছনা রাতে সাগরজলের মায়াবী পরিবেশে প্রবাল প্রাচীরের পলিপরা ডিম্বাণু ও শুক্রাণু ছড়িয়ে যৌন জননে মেতে ওঠে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুগুলোর মিলনে জন্ম নেয় নতুন নতুন পলিপ।

কিভাবে প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন গড়ে ওঠেছেঃ

সমুদ্রের বুকে প্রবাল প্রাচীরগুলো খুব ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। প্রবাল বংশ বিস্তারের জন্য সমুদ্রজলের উষ্ণতা ২০ সেঃ- ২১ সেঃ আদর্শ িএবং সে অংশে সূর্যালোক পৌঁছা আবশ্যক। তাই গ্রীষ্মমন্ডলীয় অংশে প্রবাল দ্বীপ গড়ে ওঠেছে।  প্রবাল প্রাচীর লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বাড়তে বাড়তে একসময় ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে দ্বীপে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর হলো অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকূলের কাছে অবস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। সেন্টমার্টিন দ্বীপটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ মূলত জীবন্ত প্রবাল দ্বারা গঠিত। প্রবাল পলিপ নামক সামুদ্রিক প্রাণী চুনযুক্ত কঙ্কাল তৈরি করে। এই কঙ্কাল একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে প্রবাল প্রাচীর গঠন করেছে। ধারনা করা হয়, প্রাচীনকালে বঙ্গোপসাগরের পানির তলদেশে প্রবাল বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ধীরে ধীরে স্তূপ আকারে উঁচু হতে শুরু করে। ভূগোলবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগরের তলদেশে টেকটোনিক প্লেটের ধাক্কা ও আন্দোলনের ফলে এক ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন ঘটে। এই পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের কিছু অংশ উঁচু হয়ে দ্বীপ হিসেবে উত্থিত হয়। এবং পরবর্তিতে প্রবাল গঠনের আর্দমিক পরিবশে পেয়ে বঙ্গোপসাগরের পানির তলদেশে প্রবাল বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং ধীরে ধীরে স্তূপ আকারে উঁচু সেন্টমার্টিন দ্বীপ গড়ে ওঠে। প্রবাল প্রাচীরের সাথে পলি ও বালি জমা হয়ে দ্বীপের মাটি শক্ত হয়। সময়ের সাথে সাথে ঢেউ, বায়ুপ্রবাহ এবং সমুদ্রের স্রোত দ্বীপটির প্রান্তে পরিবর্তন ঘটায়। এই প্রক্রিয়া সেন্ট মার্টিনের আকৃতি ও গঠনকে আরও উন্নত করে।

সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সুনির্দিষ্ট বয়স নির্ধারণ করা কঠিন, কারণ এটি প্রাকৃতিকভাবে গঠিত এবং এর গঠন প্রক্রিয়া কয়েক হাজার বছর ধরে চলেছে। তবে ভূতাত্ত্বিক গবেষণার ভিত্তিতে ধারণা করা হয় যে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপের গঠন শুরু হয়েছিল প্রায় ৬,০০০ থেকে ৭,০০০ বছর আগে। প্রবাল গঠনের হার খুবই ধীর, প্রতি বছরে মাত্র কয়েক মিলিমিটার। এর ভিত্তিতে বোঝা যায় যে দ্বীপটি কয়েক হাজার বছর ধরে ধীরে ধীরে গঠিত হয়েছে।

প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠার কারণ ও সহায়ক নিয়ামকঃ

১. সমুদ্রজলের উষ্ণতা ও গভীরতা : প্রবাল কীটের পলিপের বংশ বিস্তারের জন্য সমুদ্রজলের উষ্ণতা অবশ্যই ২০ সে.-২১ সে. হওয়া দরকার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০-৭৫ মিটার গভীরতায় প্রবালকীট পলিপ বৃদ্ধির সহায়ক, কারণ এই গভীরতা পর্যন্ত অংশে সূর্যালোক পৌঁছায়।

২. জলের আলোড়ন ও সমুদ্র স্রোত : জলের আলোড়ন ও সমুদ্রস্রোত প্রবাল কীট পলিপের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অক্সিজেনের জোগান অব্যাহত রাখে। এজন্য জীবন্ত প্রবাল কীট উপহ্রদের পরিবর্তে উন্মুক্ত সমুদ্রে বেশি লক্ষ্য করা যায়।

৩. পলিমুক্ত স্বচ্ছ জল : প্রবাল কীটের মুখে পলিকণা জমতে থাকলে তারা অক্সিজেন নিতে পারে না। ফলে এরা পরিপাক করতে পারে না ও মারা যায়। সেই জন্য পলিমুক্ত স্বচ্ছ জল দরকার।

৪. মিষ্টি জলের প্রভাব মুক্ততা : পরিষ্কার মিষ্টি জল প্রবাল কীটের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মোহানা থেকে দূরে এরা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

৫. লবণতার পরিমাণ : প্রচুর পরিমাণে চুনের কার্বোনেট প্রবাল কীটের প্রধান খাদ্য। জলের গড় লবণতা ২৭% থেকে ৪০%-এর বেশি হয়ে গেলে ওই কার্বোনেটের পরিমাণ কমে যায় এবং প্রবালকীট বংশবিস্তার করতে ব‍্যহত হয়।

৬. অন্তঃসাগরীর মঞ্চের অবস্থান : তটভূমি বরাবর  ১০০ মিটার গভীরতায় মহাদেশীয় শক্ত শিলার উপস্থিতি প্রবাল কীটের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের সহায়ক।

সেন্ট মার্টিন প্রবাল দ্বীপের গুরুত্বঃ

সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। পাথুরে এ দ্বীপটি তার অনন্য জীববৈচিত্র্য এবং প্রবালসমৃদ্ধ পরিবেশের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, জীববৈচিত্র্য, পরিবেশগত সুরক্ষা, এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৭ সালের পর থেকে এ দ্বীপের প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে কোনো পূর্ণাঙ্গ সরকারি জরিপ হয়নি। ১৯৯৭ সালে কানাডিয়ান সমুদ্রবিজ্ঞানী থমাস তমাসিকের নেতৃত্বে একটি গবেষণায় সেন্টমার্টিনের সমৃদ্ধ প্রাণ-প্রকৃতির তথ্য পাওয়া যায়। সমুদ্রের জীববৈচিত্র্য রক্ষায়  প্রবাল দ্বীপ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থলঃ প্রবাল দ্বীপকে "সামুদ্রিক বন" বলা হয়। এটি বিশ্বের ২৫% সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য বাসস্থান সরবরাহ করে। সমুদ্রতলের মাত্র ১ শতাংশ জায়গা দখল করে থাকা প্রবাল প্রাচীরগুলো সমস্ত সামুদ্রিক প্রজাতির প্রায় ২৫ শতাংশকে আশ্রয় দেয়।  সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রবালের পাশাপাশি মাছ, কাঁকড়া, শামুক, ডলফিন, সামুদ্রিক কচ্ছপসহ অসংখ্য সামুদ্রিক জীবের বাসস্থান রয়েছে। এখানে বেশ কয়েকটি বিরল এবং হুমকির মুখে থাকা প্রাণী যেমন অলিভ রিডলে কচ্ছপ দেখা যায়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, দ্বীপটিতে রয়েছে ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল এবং কচ্ছপ, কাঁকড়াসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণী। তবে এসব তথ্য দীর্ঘদিন ধরে হালনাগাদ হয়নি। বিচ্ছিন্ন কিছু গবেষণায় প্রবালের সংখ্যা কমার প্রমাণ মিললেও নতুন স্থানে প্রবালের জন্মও লক্ষ্য করা গেছে।

পর্যটন শিল্পে ভূমিকাঃ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। এর স্বচ্ছ নীল পানি, প্রবাল পাথর, এবং মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। প্রতিবছর ৪-৫ লক্ষ পর্যটক এই দ্বীপে ভ্রমন করে থাকেন। পর্যটন থেকে স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা হয় এবং অনেক মানুষের জীবিকা নির্বাহের সুযোগ সৃষ্টি হয়।

উপকূলীয় সুরক্ষাঃ দ্বীপটি বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকাকে জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। প্রবাল প্রাচীর প্রাকৃতিক বাঁধের মতো কাজ করে, যা সাগরের ঢেউ ও জোয়ারের তীব্রতা কমায়।

পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষাঃ প্রবাল প্রাচীর সমুদ্রের জলের গুণগত মান উন্নত করে এবং সামুদ্রিক খাদ্যজাল বজায় রাখে। এটি কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণ করে জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে ভূমিকা রাখে।

গবেষণা ও শিক্ষাঃ সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পরিবেশ ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য নিয়ে গবেষণার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এটি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্মুক্ত ল্যাবরেটরি, যেখানে তারা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র সম্পর্কে শিক্ষা নিতে পারে।

স্থানীয় সংস্কৃতি ও জীবিকাঃ  স্থানীয় মানুষের জীবিকার একটি বড় অংশ মাছ ধরা এবং পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত। দ্বীপটির পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সরেজমিনে দেখা গেছে, গত দু'দশক ধরে পর্যটনে নির্ভর দ্বীপবাসী পূর্ব পুরুষদের পেশা মাছ ধরা ধীরে ছেড়ে দিয়েছে। ছেড়ে দিয়েছে পুরো দমে চাষাবাদও।

ঔষধি ও প্রাকৃতিক সম্পদঃ সেন্ট মার্টিনের প্রবাল প্রাচীর থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান পাওয়া যায়, যা ওষুধ তৈরিতে ব্যবহার হতে পারে। প্রবাল প্রাচীর থেকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক যৌগ সংগ্রহ করা হয়, যা ক্যান্সার, এইচআইভি, আর্থ্রাইটিস, এবং অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।

সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ সুরক্ষায় আইনি কাঠামো ও সরকারের পদক্ষেপসমূহঃ
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ১৯৯৯ সালে সেন্ট মার্টিনকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করে। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সর্বশেষ ২০২০ সালের আগস্টে সেখানে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ২০২১ সালের ২ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে সেন্ট মার্টিনের সৈকতে আলো জ্বালিয়ে বারবিকিউ, দোকানপাটে বেচাকেনা, সৈকতের পাথরে সংগ্রহ, মোটরসাইকেলসহ যেকোনো ধরনের যানবাহনে চলাচল নিষিদ্ধসহ ১৪টি বিধিনিষেধ আরোপ করে।  ২০২৩ সালে জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ, টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল সীমিত করাসহ ১৩টি বিষয়ে নীতিমালা তৈরি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। সেন্ট মার্টিন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের ১ হাজার ৭৪৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে পরিবেশ মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ ২০২৪ সালে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সভায় সেন্ট মার্টিনে চার মাস পর্যটকদের যাতায়াত ও অবস্থান সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নভেম্বরে পর্যটকেরা যেতে পারলেও রাতে থাকতে পারবেন না। আর ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে গিয়ে রাতেও থাকতে পারবেন। তবে ওই সময় দিনে দুই হাজারের বেশি পর্যটক যেতে পারবেন না। আর ফেব্রুয়ারিতে পর্যটকেরা সেখানে যেতে পারবেন না। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগের বিষয়টি নিয়ে উল্টো প্রচার শুরু হয়। সেখানে মার্কিন ঘাঁটি তৈরিসহ নানা ধরনের অপপ্রচার চলতে থাকে। সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে ‘কক্সবাজারে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পরিবেশ ও পর্যটন উন্নয়ন জোট’ নামের একটি সংগঠন। সংশ্লিষ্টদের মতে, পর্যটন সীমিত করার ফলে এই খাতের সঙ্গে জড়িত ও স্থানীয় মানুষদের জীবন ও জীবিকাতেও আঘাত এসেছে। সেখানকার কুকুরগুলো খাদ্য অভাবে মারা যাচ্ছে। 

গত দুই যুগে ধরে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটনের কারণে, হাজার বছরের পুরোনো দ্বীপটির  মাটি, পানি ও বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, পর্যটনের কারণে উচ্চ তাপমাত্রার পাশাপাশি লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বন উজাড়, দূষণ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, কচ্ছপের আবাস ধ্বংস, প্লাস্টিকের ব্যবহার, মিঠাপানির সংকট, জোয়ারে সমুদ্রভাঙনসহ নানা বিপদ দেখা দিয়েছে। দ্বীপটির পরিবেশ রক্ষার জন্য টেকসই ব্যবস্থাপনা, সচেতন পর্যটন এবং সরকারের সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

সেন্ট মার্টিন সম্পর্কে মানুষের ভুল ধারণা ও অস্বচ্ছতা দূর করতে সরকার সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ সুরক্ষায় ফেব্রুয়ারী মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ সাসটেইনেবল এলায়েন্স (বিএসএ)উদ্যোগে নেওয়া হয়েছে সমুদ্র সৈকত পরিছন্নতা কার্যক্রম। এই আয়োজনে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় জনগণের পরিবেশ স্বাক্ষরতা ও সমুদ্র সৈকত পরিছন্নতা কার্যক্রমে কারিগরী জ্ঞান প্রদান করে বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা ইপসা। এই কার্যক্রমে উপস্থিত ছিলেন টেকনাফ উপজেলার নির্বাহী অফিসার, পরিবেশ অধিদপ্তর, কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রবৃন্দ, ছাত্র প্রতিনিধি, পরিবেশ কর্মী, শিক্ষক এবং সেন্টমার্টিনে অবস্থানরত বিভিন্ন সংগঠন ও পেশাজীবি’র প্রতিনিধি।


শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের পূর্ব শর্ত সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

চট্টগ্রাম বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও অন্যতম বন্দর নগরী । আকার ও জনসংখ্যার দিক থেকে রাজধানী ঢাকা’র পরেই চট্টগ্রামের স্থান। পাহাড় আর সমুদ্র দিয়ে ঘেরা চট্টগ্রাম শহর। ১৯৯০ সালে এই শহরের জনসংখ্যা ছিল ২০ লক্ষ, বর্তমানে এই শহরের লোকসংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ। কিন্ত ৩৫ বছরে শহরের আয়তন বাড়েনি। বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে উন্নত যোগযোগ ব্যবস্থা, কর্মসংস্থানের সুযোগ, এই শহরের জনসংখ্যা জ্যামিতিক আকারে বাড়ছে। বর্ধিত জনসংখ্যা ও অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে হারিঁয়ে যাচ্ছে  প্রকৃতির আশীর্বাদখ্যাত চট্টগ্রাম শহরের সৌন্দর্য। এছাড়া বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিগত প্রায় কয়েক দশক ধরেই এই নগর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি,  জোয়ার-ভাটা, পাহাড় ধসসহ বিভিন্ন দুর্যোগে আক্রান্ত হচ্ছে নিয়মিত। চট্টগ্রামে গত দুই দশকে যে সমস্যাটি নগরবাসীকে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলেছে সেটি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। প্রতি বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির সময় নগরের অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। নগরের জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ শহরের বর্জ্যগুলো খাল-নালায় গিয়ে প্রতিবন্ধকতা তৈরি। জলাবদ্ধতা নিরসনে বর্তমানে চট্টগ্রাম শহরে  প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকার চারটি প্রকল্প চলমান। নগরবাসীর মতে, উপরোক্ত প্রকল্পের মধ্যে আন্ত:সমন্বয়ের অভাব রয়েছে, বিশেষ করে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতিকরণের কোন সম্পূরক প্রকল্প না থাকা। ফলে নগরবাসী আশংকা করছে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতি না করলে জলাবদ্ধতা নিরসনে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প ভেস্তে যেতে পারে। সামনের বর্ষা মৌসুমের আগেই এই বিষয়ে নিয়ে ভাবতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মতে, একজন নাগরিক প্রতিদিন গড়ে ৬০০ গ্রাম (বিশ্বব্যাংকের মতে, ৭৪০ গ্রাম) বর্জ্য উৎপাদন করে। সে হিসেবে, ৭০ লাখ লোক চট্টগ্রাম নগরে প্রতিদিন ৪২০০ টন বর্জ্য উৎপন্ন করে। বছরে উৎপন্ন হয় ১৫ লক্ষ ৩৩ হাজার টন বর্জ্য। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ৯ লাখ ১৩ হাজার টন বর্জ্য সংগ্রহ করেছে। তাহলে বাকি, ৬ লক্ষ ২০ হাজার টন বর্জ্য খাল-নালা, নদীতে ও পরিবেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এই অসংগ্রহীত বা ব্যবস্থাপনার বাহিরের বর্জ্য নগরের জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ। এই অব্যবস্থাপনাকৃত বর্জ্য সংগ্রহে বা ব্যবস্হাপনায় আনতে কোন উদ্যোগ বা প্রকল্প নগরবাসীর জানা নেই। তাই জনমনে শংকা দেখা দিয়েছে, জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সফলতা ও কার্যকারিতা নিয়ে। জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পগুলোর কৌশলহলো চট্টগ্রাম শহরের খাল-নালা, নর্দমাগুলোর পরিস্কার, সংস্কার, পুনঃখনন, সম্প্রসারণ ইত্যাদি। সরেজমিনে দেখা গেছে, খালগুলোর পরিস্কারের সাথে সাথে সেগুলো আবার বর্জ্যে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নগরের অনেক জায়গায় বাসা-বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য ডাম্প করা হয় খালের পাড়ে। উম্মুক্ত জায়গায় রাখা এইসব বর্জ্য পরিবেশ দূষণ করছে ও একসময় খালে পড়ে খাল ভরাট করছে। যার ফলে খালের পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। নগরের উৎপাদিত বর্জ্য সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা না আনতে পারলে, প্রকল্প বাস্তবায়নের পরও নগরের জলাবদ্ধতার তেমন কোন পরিবর্তন আসবে না।

চট্টগ্রাম শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার নীতিগত দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতিতে কাজ করছে সিটি করপোরেশন। উৎস হতে বর্জ্য সংগ্রহের জন্য সিটি করপোরেশন ২০১৬ সাল থেকে “ডোর টু ডোর কর্মসূচীর” মাধ্যমে ১৯৯৫ সেবক এই কর্মসূচীতে নিয়োজিত করেছে। তাছাড়া, ড্রেন ক্লিনার, রাস্তার ঝাড়ুদার, বর্জ্য লোডিং এবং আনলোডিং শ্রমিক, স্প্রে ম্যান, ভ্যান চালক ও ওজন কর্মীসহ সব মিলিয়ে ৩৬৫৫ শ্রমিক বর্জ্য সংগ্রহে নিয়োজিত রয়েছে। তারা প্রাথমিক উৎস পয়েন্ট (বাসাবাড়ি) থেকে বর্জ্য সংগ্রহ (রিকশা, ভ্যান, টমটম মাধ্যমে) করে সেকন্ডারী পয়েন্ট (ডাস্টবিন, কন্টেইনার, এসটিএস) রেখে আসে, সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের গাড়ি (ডাম্প ট্রাক, কম্পেকটর) করে এইসব বর্জ্য ল্যান্ডফিলে চুড়ান্তভাবে নিস্কাশন করা হয়। ৭০ লক্ষ নগরবাসীর সৃষ্ট বর্জ্য মাত্র ১৯৯৫ সেবক দিয়ে সংগ্রহ করা রীতিমত চ্যালেঞ্জ, তাই অনেকক্ষেত্রে সঠিক, পরিপূর্ণ নিয়মিতভাবে বর্জ্য সংগ্রহ ব্যহত হচ্ছে। প্রাথমিক উৎস থেকে বর্জ্য সংগ্রহের বিষয়টি প্রাইভেট সেক্টর বা কমিউনিটি ভিত্তিক সংগ্রহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারলে সাশ্রয়ী, ফলপ্রসু ও কার্যকর হবে। সেকেন্ডারী পয়েন্ট থেকে ল্যান্ডফিলে চুড়ান্তভাবে নিস্কাশন বিষয়টি সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে পরিচালনা করতে হবে। সেক্ষেত্রে, সেকেন্ডারী কালেকশন পয়েন্ট, সেকেন্ডারি ট্রান্সপার স্টেশন এর আধুনিকায়ন করতে হবে। এবং সেকেন্ডারী কালেকশন পয়েন্ট, সেকেন্ডারি ট্রান্সপার স্টেশন হতে বর্জ্য চুড়ান্তভাবে নিস্কাশনের জন্য ব্যবহ্রত পরিবহন মাধ্যমগুলোর পর্যাপ্ততা ও আধুনিকায়ন নিশ্চিত করতে হবে। চট্টগ্রাম শহরে যে দুটি ল্যান্ডফিল (আরেফিন নগর ও আনন্দ বাজার) রয়েছে সেগুলোর আধুনিকায়ন করতে হবে সেনিটারি ল্যান্ডফিল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রয়োজনে নতুন আধুনিক ও পরিবেশবান্ধব ল্যান্ডফিল ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহার করতে হবে। চট্টগ্রাম সিটির উৎপাদিত বর্জ্যের ৬৩শতাংশ হল খাদ্যের উচ্ছিষ্টাংশ বা খাদ্যবর্জ্য, ১০ শতাংশ হল কাগজ জাতীয় বর্জ্য, ৯ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য, কৃষিজ বর্জ্য ৭ শতাংশ, বাকিগুলো অন্যান্য বর্জ্য। শহরের উৎপাদিত ৮০-৯০ শতাংশ বর্জ্যই পুনর্ব্যবহারযোগ্য। পরিসংখ্যানে দেখা যায় চট্টগ্রামে বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের হার মাত্র ৮-১০%। এই বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করতে পারি। যার ফলে, অর্থনৈতিকভাবে লাভবান, কার্বন নিঃসরণ কমানো ও দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করতে পারি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বৃত্তাকার অর্থনৈতিক মডেল চালু করতে হবে।  বৃত্তাকার অর্থনৈতিক মডেলে উৎপাদন ও ভোগের মধ্য সমন্বয় সাধন করে। এটি পণ্যের সম্ভব অতিরিক্ত মূল্য নিশ্চিত করে এবং পণ্যের জীবনচক্রকে প্রসারিত করে। 

চট্টগ্রাম শহরে উৎপাদিত বর্জ্যকে, পুনর্ব্যবহারকরণের পথে অন্যতম বাধাঁ হলো উৎসে বর্জ্য পৃথকীকরণ না হওয়া। বর্জ্য উৎসে পৃথকীকরণ না হলে সেটাকে প্রসেস করা সময় ও ব্যয় সাপেক্ষ। সেক্ষেত্রে, নগরবাসীকে উৎসে বর্জ্য পৃথকীকরণের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পচঁনশীল, অপচঁনশীল ও ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য আলাদা করে রাখার অভ্যাগ গড়ে তুলতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহে কালার কোডেড বিন ব্যবহারকে প্রচার এবং নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে, ‍মিক্সড বর্জ্য থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য আলাদাকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্য সংগ্রহের জন্য বর্জ্য সংগ্রহকারীদের  প্রশিক্ষণ ও অনুদান প্রদান করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ভ্যালু চেইন নির্ণয় করে, সেখানকার ইনসেনটিভ ও ইন্টারেস্টকে অবহিত করে এক্টরদেরকের কানেকটেড করতে হবে। উৎপাদনকারীকে ভোক্তা পর্যায়ে সৃষ্ট বর্জ্য সংগ্রহ বা ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে হবে।

জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রকল্প পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মধ্যে নিয়মিত সমন্বয় ও সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে ওয়াসা, চট্টগ্রাম বন্দর, বেসরকারী উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অর্ন্তভূক্ত করা যেতে পারে।

সর্বোপরি, স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইনের পঞ্চম তফসিলে বর্জ্য ফেলে খাল-নালা ভরাটকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অপরাধ দন্ডের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সিটি করপোরেশনকে। আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে, যত্রতত্র ময়লা ফেলা বন্ধে জরিমানা ও কঠোর শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে হবে। তবেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নতি হবে। জলাবদ্ধতা প্রকল্পের সুফল পাবে নগরবাসী।