ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার সহ বিভিন্ন আইসিটি গ্যাজেট এখন আমাদের নিত্যসঙ্গি ও নির্ভরতা কেন্দ্র। ব্যস্ততার জীবনকে সহজ করে দিচ্ছে আইসিটি ও তার বিভিন্ন সেবা-সমূহ যেমন অন-লাইন মার্কেটিং, অন-লাইন ব্যাকিং, ই-কমার্স, অন-লাইন স্টোরেজ ও ক্লাউডিং। আইসিটি এই নির্ভরতা আমদেরকে আবার অনেক ঝুকিঁর মধ্যে ফেলে দিয়েছে। হ্যাকার ও স্ক্যামার’রা বসে অছে কিভাবে আমাদেরকে ফাঁদে পেলে সব তথ্য ও অর্থ ছিনিয়ে নেবার। সে জন্য আমাদের ভাবা উচিত আইসিটি ও ওয়েব এর ব্যবহারের নিরাপত্তা নিয়ে। সহজ কিছু নিয়ম মেনে চললেই আমরা রোধ করতে পারি সম্ভব হ্যাকিং, ওয়ার্ম, ভাইরাস, তথ্য চুরিসহ আরও অনেক কিছুই। নি¤েœ কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু সহজ সরল নিরাপত্তা’র ট্রিপস নিয়ে আলোচনা করা হল;
ওয়েব ব্রাউজারে WOT (web of trust) এড অনটি ইনস্টল করা। এই এড-অনটি ব্যবহার করলে, আপনি কোন সাইটে গেলেই সেই সাইটের রেটিং ৪ ধাপে (Trust Worthiness, Privacy, Vendor Reliability, Child Safety) দেখিয়ে দিবে এবং খারাপ সাইটগুলোর জন্য আপনাকে সতর্ক করে দিবে। পাশাপাশি লিংকগুলোর জন্যও দেখিয়ে দিবে তার রেটিং।
সিকিউরিটি সফটওয়্যার বা অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা। কম্পিউটারের নিরাপত্তা যদি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যারের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে অবশ্যই ভাল মানের একটি অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা এবং এটাকে নিয়মিত আপডেট রাখা। বিনা মূল্যে অনেক অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার পাওয়া যায় কিন্তু সেগুলোতে নিরাপত্তার সকল ব্যবস্থা থাকে না।
ফায়ারওয়াল কে সক্রিয় রাখা। ফায়ারওয়াল হল একটি বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার ব্যবস্থা। এটা ইনকামিং ও আউটগোয়িং ইন্টারনেট সংযোগ পর্যবেক্ষণ করাসহ হঠাৎ করে হ্যাকারদের আক্রমণ রোধ এবং নিজ থেকেই ছড়িয়ে পড়া ওয়ার্ম প্রতিহত করতে কাজ করে। এটি সক্রিয় করার জন্য উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের Run এ গিয়ে firewall.cpl লিখে এন্টার দিলে ফায়ারওয়াল সেটিংস খুলবে। এরপর প্রয়োজন অনুযায়ী ফায়ারওয়াল সেটিং করে নিন।
কম্পিউটার অপারেটিং সিষ্টেম সহ, ব্যবহ্রত অন্যান্য সফটওয়্যার আপডেট রাখা। কম্পিউটারে ব্যবহ্যত সফটওয়্যার সমূহকে নিয়মিত আপডেট রাখলে তা হ্যাকিং, ওয়ার্ম, ভাইরাস থেকে কম্পিউটারতে সুরক্ষা করে।
ই-কর্মাস ব্যবহার বা অন-লাইনে তথ্য ও অর্থ লেনদেনে সর্তক থাকা। অনলাইনে তথ্য ও অর্থ লেনদেনের সময় ঐ সাইট সর্ম্পকে বিস্তারিত জানুন। প্রয়োজনে রিভিউ দেখুন। তথ্য ও অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের ফোন নম্বর ও ঠিকানা আছে কিনা তা খেয়াল করুন। যদি এই সমস্ত তথ্য না থাকে তাহলে তথ্য ও অর্থ লেনদেনে থেকে বিরত থাকুন।
তথ্য ও অর্থ লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের ওয়েব সাইটের লিংকে https আছে কিনা ভাল করে খেয়াল করুন। https থাকলে বুঝবেন সাইটটি নিরাপদ। আর https না থাকলে অর্থ ও তথ্য লেনদেন থেকে বিরত থাকুন।
পাসওয়ার্ডে বিশেষ ক্যারেক্টারের ব্যাবহার করুন। অধিকাংশক্ষেত্রে আমরা ইন্টারনেট ব্যবহারের ইমেইল, ফেইসবুক ছাড়াও অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সাবধান নই। সহজেই মনে রাখা যায়, এমন ধরনের পাসওয়ার্ড সবাই ব্যবহার করতে চাই। কিন্তু আপনি কি জানেন? আপনার কাছে যেটা মনে রাখা সহজ, হ্যাকারদের কাছে সেটা অনুমান করা তার চেয়েও সহজ। এজন্য সর্বদা পাসওয়ার্ড বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কিবোর্ডের বিশেষ অক্ষর যেমন- F@$*G%r# ইত্যাদি মিলিয়ে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। তাহলে হ্যাকার অথবা অন্য কেউ সহজে আপনার পাসওয়ার্ড অনুমান করতে পারবে না, ফলে অনলাইনে আপনি থাকবেন নিরাপদ। এক পাসওয়ার্ড বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন আর আপনার নাম ও জন্ম সাল ব্যবহার না করাই উত্তম। প্রয়োজনে আপনার বিশেষ পাসওয়ার্ডটি অন্য কোথায় সংরক্ষণ করুন ও কাউকে শেয়ার করবেন না। বিশেষ করে অন্য কারো মোবাইল বা কম্পিউটারে লগ-ইন করলে, ব্যবহার শেষে অবশ্যই লগ-আউট করবেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারের (ওয়েব ব্রাউজিং) সময় সতর্ক থাকুন। ইন্টারনেটের যথাযথ ব্যবহার আমরা অনেকেই করতে জানি না। বিভিন্ন ধরনের লিংক এবং আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দেখে এতে হুটহাট করে ক্লিক করি, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। না বুঝেই ইমেইল এর স্প্যাম ফোল্ডারে আসা ইমেইলের লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। কোনো কিছু ডাউনলোড করার সময় সতর্ক থাকুন কোন ধরনের তথ্য আপনি ডাউনলোড করতে চাচ্ছেন। ভুলবশত কোন ওয়ার্ম বা ভাইরাস ডাউনলোড দিচ্ছেন না তো? অনলাইনে হ্যাকার বা দুষ্কৃতকারীরা সবসময় আপনাকে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন এবং ডলারের প্রলোভন দেখিয়ে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে। এজন্য আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন বা লিংকে ক্লিক করার আগে ভেবে চিন্তা ক্লিক করুন। নয়তো এক ক্লিকেই কখনো আপনার কম্পিউটার বা নিজের বিপদ ডেকে আনবেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে সর্তক থাকুন। সোশ্যাল মিডিয়া’তে (ফেসবুক/টুইটার/স্কাইপে/হুয়ার্টস অ্যাপ ইত্যাদি) অপরিছিত কারও রিকোয়েস্ট এসেপ্ট করবেন না। প্রয়োজনে তার প্রোফাইল দেখুন ও মিউটাল ফ্রেন্ড তালিকা দেখে শিউর হন। অথবা তার ছবিটি গুগলে সার্ছ দিয়ে দেখতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়া’র প্রোফাইলে ব্যবহ্যত ছবি টি আসলে তার কিনা। অনেক সময় স্ক্যামার’রা সেলিব্রেটিদের ছবি ব্যবহার করে আপনাকে বন্ধু বানিয়ে ফাঁদে পেলতে পারে।
কম্পিউটারে রক্ষিত মূল্যবান তথ্য সমূহ নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা। অনেক সময় আমরা না বুঝে কম্পিউটারের ক্ষতি সাধন করি ও সেট আপ বা ফরমেট করি ফেলে। সেজন্য আমাদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যায়। সে অপূরনীয় ক্ষতি হতে রক্ষা পেতে মূল্যবান তথ্য সমূহ এক্রটা হার্ডডিস্কে নিয়মিত ব্যাকআপ রাখা। সি ড্রাইভ ও ডেস্কটপে গুরুত্বপূর্ণ কোন ফাইল না রাখা। পারসনাল কম্পিউটারটিতে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা।
প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণের জন্য ক্লাউড ব্যবহার করা। আপনার ডিভিডি বা পোর্টেবল হার্ডডিস্ক তো হারিয়ে যেতে পারে, নষ্টও হতে পারে। তাই প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো এখন ক্লাউডে সংক্ষণ করুন। এর জন্য খুব ভালো ভালো কিছু সার্ভিস আছে, যেমন ড্রপবক্স, স্পাইডারওক, গুগল ড্রাইভ বা স্কাইড্রাইভ। এভাবে ক্লাউডে রাখলে সেগুলা খুব সহজে নষ্ট হবে না।
উপরোক্ত বিষয় গুলো মেনে চললে খুব সহজেই বাড়িয়ে নিতে পারবেন আপনার কম্পিউটার সহ প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধ জীবন ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন