ভ্রমন করা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। আমরা ব্যক্তিগত ও পেশাগত কর্ম ব্যস্ততা, পারিবারিক, সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কর্মের একঘেয়েমি জীবন ক্ষণিকের জন্য হলেও বিশ্রাম ও তৃপ্তি পেতে চায়। আর সেই জন্য ভ্রমন হল একমাত্র অবলম্বন। আত্মার প্রশান্তি, মানষিক অবস্থার পরিবর্তন, দেশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত ও স্থান সম্পর্কে ধারনা লাভ, নানামুখী মানুষের সাথে পরিচয়, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন ও সর্বোপরী কর্মের একঘেয়েমি জীবনকে নতুনত্ব দেওয়া ও মন মানষিকতাকে চাঙ্গা করার জন্য ভ্রমনের প্রয়োজন রয়েছে। আর কাজের পাশাপাশি ভ্রমন হলে ত কথাই নেই।
আমি একজন ভ্রমন পিপাষু মানুষ, সুযোগ পেলেই ভ্রমনে বের হয়ে পড়ি। আর সেটা যদি হয় নিজ দেশের গন্ডির বাইরে ও অফিসিয়াল কাজে তাহলে কথায় নেই। অনেকটা রথ দেখা হল, কলাও বেচা হল। বিদেশ ভ্রমন এর অভিজ্ঞতা বলতে শুধু মিয়ানমারে ভ্রমনের অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে, তা ও ছিল অফিসিয়াল কাজে ২০১৩ সালে ও স্বল্প সময়ের জন্য। অনেক দিন পর আবার সুযোগ হল অফিসিয়াল কাজে সিঙ্গাপুওে শিক্ষা ভ্রমন করার। আমরা সরকারি প্রতিনিধি ও বেসরকারি প্রতিনিধি মোট সাত জন এই সফরের সদস্য ছিলাম। আমাদের সফর সঙ্গি হিসেবে ছিলেন, উপ-সচিব, প্রবাসি কল্যাণ ও বৈদিশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, যুগ্ন মহাসচিব, বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি (বায়রা), প্রোগ্রাম কো-অডিনের্টর প্রকাশ-ব্রিটিশ কাউন্সিল, প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, রামরু, পরিচালক (সমাজ উন্নয়ন), ইপসা, রিসার্চ এন্ড লানিং অফিসার, ইপসা ও আমি (প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ইপসা)। সিঙ্গাপুর সফরটি মূলত ছিল, সিঙ্গাপুর অবস্থিত বাংলাদেশী শ্রমিকদের অবস্থান নির্ণয় ও বাংলাদেশী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা। পরবর্তীতে এই সফরের অর্জিত শিক্ষণীয় বিষয় সমূহ নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যক্তিবর্গকে তাগিদ দেওয়া, যাতে বাংলাদেশী অভিবাসন প্রক্রিয়াটা নিরাপদ ও নিয়মিত হয়। যাই হোক এই বিষয় নিয়ে আরেক দিন আলোচনা হতে পারে। আজকের আলোচনা মূলত সিঙ্গাপুর ভ্রমন কাহিনী ও অভিজ্ঞতা নিয়ে আলোচনা।
প্রথমে আমরা সিঙ্গাপুরের ভিসার জন্য আবেদন করি, সিঙ্গাপুর হাই কমিশন কর্তৃক মনোনিত এজেন্সি থেকে, এজেন্সির তালিকা ও করনীয় দিক সর্ম্পকে ওয়েব সাইটে সু-স্পষ্ট উল্লেখ করা আছে। ভিসা পেতে সর্বমোট খরছ হয়েছিল ৪৫০০ টাকা। কারণ আমরা এজেন্সির নির্দেশনা মোতাবেক সমস্ত কাগজপত্র সঠিকভাবে সাবমিট করে ছিলাম তাই ভিসা পেতে দেরী হয়নি। ভিসা পেতে যে সমস্ত কাগজপত্র জমা দিয়েছিলাম;২. ম্যাট পেপারে ছাপানো ( ২ ঢ ২ ) দুই কপি ছবি
৩. সর্বশেষ ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটম্যান্ট (ব্যাংক স্টেটম্যান্ট অবশ্যই লাখের অধিক টাকা জমা থাকলে ভাল হয়)
৪. ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত সলভেন্সি সার্টিফিকেট
৫. সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত ছুটি মঞ্জুর আবেদন
৬. সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত নো অবজেকশন সার্টিফিকেট
৭. ভিজিটিং কার্ড
এইগুলো কাগজপত্র ঠিকমত জমা দিলে খুব সহজেই ভিসা পাওয়া যায়। আমরা ভিসা আবেদন করার ১০-১২ কর্ম দিবসের মধ্যে সিঙ্গাপুরে ভ্রমনের ভিসা পেয়ে যাই।
ভ্রমন পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ সকাল ০৬ টা বাসা থেকে বের হই অফিসের গাড়ি করে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা, বহাদ্দারহাট না যেতেই আমাদের গাড়ি ঘুরাতে হল, কারণ আমাদের দল নেতা ভুলবশত ডলারের পরিবর্তে বাসা থেকে ইন্ডিয়ান রুপি নিয়ে এসেছেন। মনে মনে ভাবলাম দিনের শুরুটা মনে হয় ভাল হল না। যাই হোক আল্লাহর উপর ভরসা রাখলাম। দল নেতা এর বাসা থেকে দ্রুত ডলার নিয়ে চট্টগ্রাম এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। পথে লালখান বাজার থেকে আমার আরেক সহকর্মি ও সিঙ্গাপুর ভ্রমনের সহযাত্রি উঠলেন। আমাদের গাড়ি খুব দ্রুত এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে চলল। এবং ঠিক সময়মত আমরা চট্টগ্রাম এয়ারপোর্ট পৌছে গেলাম। আগ থেকেই রিজেন্ট এয়ারলাইন্স এর টিকেট ক্রয় ছিল এবং যাত্রা সময় ছিল সকাল ০৮ টা। এয়ারপোর্টে গিয়ে শুনি রিজেন্ট এয়ারলাইন্স এর এয়ার ক্রাফটটি আসতে ঘন্টা খানিক বিলম্ব হতে পারে। তখন আমরা চিন্তায় পড়ে গেলাম, কারণ ঢাকা থেকে আমাদের ফ্লাইট বেলা ১২.৪৫ মিনিটে। তাছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটে তিন ঘন্টা আগে কাউন্টারে রিপোটিং করতে হয়। মনে মনে ভাবলাম বিড়ম্বনা আমাদের পিছু ছাড়ছেনা। এই অবস্থায় আমাদের টিম লিডার দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে, রিজেন্ট এয়ারলাইন্স এর টিকেট বদলিয়ে সকাল ৮.৩০ মিনিটের ইউএস বাংলার টিকেট ক্রয় করলেন এবং আমরা সকাল ৯.১৫ মিনিটের মধ্যে ঢাকা, হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোটের্ পৌছলাম। এই সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা কিন্ত ভালভাবে এগিয়ে যাচ্ছি।
পরবর্তিতে আমরা খোজাখোজি করে আমাদের নির্ধারিত এয়ার লাইন্স সিঙ্গাপুর এয়ার লাইন্স এর কাউন্টার খুজে বের করলাম। পূর্বে থেকে আমরা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এর টিকেট ক্রয় করে রেখিছিলাম। ইতিমধ্যে আমাদের সঙ্গে যাওয়া অন্যান্য সহ-কর্মীরা যারা ঢাকায় থাকেন তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। আমরা একসাথে কাউন্টারে দাড়িয়ে এয়ারলাইন্স এর টিকেট নিলাম ও আমাদের সঙ্গে ব্যাগগুলো এয়ার লাইন্স কাউন্টারে জমা দিয়ে দিলাম। পরবর্তীতে ইমিগ্রেশন কাউন্টার এর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে আমরা এয়ারপোটের্ এর ভিতরে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এমন সময় বায়রা’র সেক্রেটারী নোমান ভাই আমদেরকে এয়ারপোটের্ এর তৃতীয় তলায় ইবিএল এর স্কাই লাউঞ্চে লাঞ্চ এর আমন্ত্রন জানালেন। তখন প্রায় বেলা ১১.৩০ টা, সবার ভাল খিদে ও ছিল। স্কাই লাউঞ্চের সু স্বাদু ও রুচিকর খাবার আমারা সবাই উপভোগ করলাম। তার জন্য নোমান ভাইকে বিশেষ ধন্যবাদ জানালাম। বেলা ১২.১৬ টায় আমরা ফ্লাইটে উঠার জন্য প্রস্ততি গ্রহন করলাম এবং ফাইনাল চেকিং এর জন্য লাইনে দাড়ালাম। নিরাপক্তা কর্মীরা আমার বেল্ট, সু ও কোর্ট খুলে পরীক্ষা করল। আমি তাতে সহযোগিতা করলাম। এবং একজন নিরাপক্তা কর্মী আমাকে বলেই ফেলল আমার কাছে কত ডলার আছে। আমি ভয় না পেয়ে যথাযথ উত্তর দিলাম। সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে আমরা এয়ারবাসে গিয়ে বসলাম। আমার সিটটি এয়ারবাসের শেষের দিকে মাঝামাঝি অবস্থানে পড়ল। এয়ারবাসের ক্রুরা আমাদের স্বাগতম জানালেন এবং গরম টাওয়াল দিলেন হাত মুখ পরিস্কার করার জন্য। পরবর্তীতে নির্ধারিত সময় বেলা ১২.৪৫ মিনিটে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুরের উদ্দেশ্যে হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে ত্যাগ করল। এয়ারবাসটি খুবই আধুনিক ছিল । আমরা সিটের সামনে অবস্থিত স্ক্রিনে দেখতে লাগলাম আমাদের এয়ারবাসের গতি, এয়ারবাসটির অবস্থান ও ঢাকা থেকে সিঙ্গাপুরের দুরুত্ব। কিছুক্ষণ যেতে না যেতে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এর ক্রুরা যাত্রিদের পছন্দের মত খাবার ও পানীয় দিতে শুরু করল। আমরা আমাদের প্রয়োজন মত পছন্দনীয় খাবার ও পানীয় খেতে লাগলাম। এদিকে স্ক্রিনে দেখলাম আমরা কক্রাবাজার ছেড়ে মিয়ানমারের আকাশ সীমানা অতিক্রম করছি। পরবর্তীতে থাইল্যান্ডের সীমানায় ঢুকে গেলাম এভাবে থাইল্যান্ডের আকাশ সীমানা শেষ করে মালয়শিয়ার আকাশ সীমানায় প্রবেশ করলাম। এভাবে প্রায় ৪ ঘন্টা পর স্থানীয় সময় ৬.৪৫ মিনিটে আমরা সিঙ্গাপুরে অবতরণ করলাম। যেহেতু সিঙ্গাপুর বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত, সেহেতু বাংলাদেশের সময় থেকে সিঙ্গাপুর এর স্থানীয় সময় দুই ঘন্টা বেশি যোগ করতে হয়।
সিঙ্গাপুরের বিমানবন্দরটি অনেক সুন্দর গোছানো।
(ছবি) যাত্রিদের চলাচলের সুবিধার্থে রয়েছে মুভিং ওয়াকওয়ে (প্লেন স্কেলেটর)। আমরা কিছু সময় হেটে ও কিছু সময় মুভিং ওয়াকওয়ে তে করে ইমিগ্রেশন পয়েন্টে যেতে লাগলাম। সিঙ্গাপুরের বিমানবন্দরে যাত্রিদের সুবিধার্থে রয়েছে স্কাই ট্রেন, পাতাল ট্রেন ও ওয়াইফাই সুবিধা। আধুনিক বিমানবন্দরের সমস্ত সুবিধা সিঙ্গাপুর বিমান বন্দরে রয়েছে। প্রায় ঘন্টা খানেক হাটার পর আমরা ইমিগ্রেশন পয়েন্টে আসলাম ও লাইন দড়ে দাড়ালাম ইমিগ্রেশন ক্রস করার জন্য। একে একে সবাই ইমিগ্রেশন পার হল। আমি ইমিগ্রেশন পয়েন্টে যাবার পর দায়িত্বরত অফিসার আমরা পাসপোর্ট স্কেন করে আমার নাম জিজ্ঞাসা করলেন এবং সিঙ্গাপুরে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। আমি যথাযথ উত্তর দিলাম এবং একটু পরে আরেক ইমিগ্রেশন অফিসার এসে আমাকে ইমেগ্রেশন পয়েন্টের বাইরে অন্য জায়গায় নিয়ে গেল এবং আমাকে অপেক্ষা করতে বলল। আমি রীতিমত ভয় পেতে লাগলাম এবং নিজেকে সাহস দিতে লাগলাম। ভাবলাম কিছু হবে না।
পরে একজন ইমিগ্রেশন অফিসার এসে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে লাগলেন, আমার নাম, কোথায় চাকুরী করি, চাকুরীর ধরন, সিঙ্গাপুরে আসার কারণ, সিঙ্গাপুরে কোথায় উঠেছি, হোটেলের ঠিকানা, রিটার্ন টিকেট আছে কিনা তা দেখতে চাইলেন, এমনকি আমার মোবাইলে কি আছে তাও দেখতে চাইলেন। আমি সাহস ও ধৈর্য ধরে ইমিগ্রেশন অফিসার এর সমস্ত প্রশ্নের উক্তর দিতে লাগলাম এবং প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র আমার সাথে অবস্থিত ছোট ব্যাগ থেকে বের করে দেখাতে লাগলাম। ভাগ্য ভাল খেয়াল করে প্লেনের টিকেট, হোটেল বুকিং টিকেট, জাতীয় পরিচয় পত্র কপি, ভিজিটিং কার্ড ইত্যাদি সঙ্গে রেখেছিলাম। মনে মনে ভাবছি আমার সহযাত্রি ও সহকর্মীরা আমার জন্য খুব চিন্তা করছে। পরবর্তীতে শুনেছিলাম বায়রা’র সেক্রেটারী নোমান ভাই ও পরিচালক মাহাবুব ভাই খুব চেষ্টা করেছিলেন আমার ব্যাপারে খোজ নিতে, তবে তারা ব্যার্থ হয়েছিলেন। কেউ আমার ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারে নাই কারণ এটা গোপনীয় ও ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট এর একান্ত ব্যাপার। যাই হোক মনে মনে আমি ভেবেছিলাম, যেহেতু আমি কোন অপরাধ করিনি আর সমস্ত কাগজ পত্রাদি আমার ছিল এবং চাহিবা মাত্র আমি সব প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রাদি সিঙ্গাপুরের ইমিগ্রেশন অফিসারকে দেখিয়েছি, তাই ভয় করার কিছু নেই। প্রায় এক ঘন্টা পর ইমিগ্রেশন অফিসার আমাকে ডেকে আমার পাসপোর্ট আমার হাতে দিয়ে মৃধুভাষন সুরে সিঙ্গাপুরে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। আমি খুশি হলাম এবং আল্লাহর নিকট শুকরিয় আদায় করলাম। ইমিগ্রেশন ক্রস করে দেখি, আমার সহকর্মীরা আমার অপেক্ষায় দাড়িয়ে আছে। তারা আমাকে দেখে খুব খুশি হলেন এবং ভিতরে আমার সাথে কি হয়েছিল তা জানতে চাইলেন। আমি উনাদের সব কিছু খুলে বললাম। ইমিগ্রেশন ক্রস করে শুনলাম আমার ট্রাভেল ব্যাগটি খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। রীতিমত আমার দুঃচিন্তা আবার বেড়ে গেল। আমি কনভেয়ার বেল্ট এর কাছে গিয়ে আমার ব্যাগটি খুজলাম কিন্তু ব্যাগের সন্ধান পেলাম না। পরবর্তীতে লস্ট এন্ড ফন্ড কেন্দ্রে গিয়ে আমার হারিয়ে যাওয়া ব্যাগের ব্যাপারে অবহিত করলাম। কর্তৃপক্ষ আমার বিষয়টি আমলে নিলেন এবং ব্যাগের বিস্তারিত বিবরণ লেখে রাখলেন। এই জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন। মনে মনে ভাবছি আমার কাপড় ছোপড় সব শেষ এবং হোটেলে গিয়ে কি পড়ব বা এই কয় দিন কিভাবে কাটবে। এক পর্যায়ে লস্ট এন্ড ফন্ড এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমাকে ১২০ ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় দশ হাজার টাকা দিয়ে বললেন একটি ব্যাগ কিনে নেওয়ার জন্য। এবং আশস্ত করলেন ব্যাগ পাওয়া মাত্র আমার নিকট পৌছে দিবে। মনে মনে ভাবলাম কোন কিছু হারিয়ে গেলে কি আর ফেরত পাওয়া যায়। লস্ট এন্ড ফন্ড এর থেকে টাকা পাওয়ার বিষয়টি সহকর্মীদের কাছে শেয়ার করলে বিষয়টি নিয়ে সবাই খুব মজা করলেন। পরবর্তীতে আমরা টেকি্রা ক্যাবে করে সিঙ্গাপুরের চাংঙ্গি এয়ারপোর্ট থেকে পূর্বে নির্ধারিত হোটেলের উদ্দ্যেশে নোভেনা রওনা দেই। আমাদের সাথে ছিলেন বৈদিশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব, উনাকে রিসিভ করার জন্য সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে গাড়ি পাঠিয়েছিলেন। সচিব মহোদয় হাই কমিশন এর গাড়ি করে হোটেলের উদ্দ্যেশে রওনা দেন। প্রায় ২৫ মিনিট এর মধ্যে আমরা আমাদের হোটেলে পৌছে যাই। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে, রাত নয়টায় আমরা খাবারের উদ্দ্যেশে মোস্তফা সেন্টারে কাছে যাই। সেখানে একটি ইন্ডিয়ান রেষ্টুরেন্ট আমরা রাতের খাবার খেয়ে, রাত এগারটার দিকে আবার হোটেলে ফিরে আসি। হোটেলে প্রবেশ না করতেই রিসিপশন থেকে একজন বলল আবদুস সবুর কে আপনার একটি লাগেজ এয়ারপোর্ট থেকে এসেছে। খবর টি শুনার পর অমি খুব আনন্দিত হলাম এবং আমার সহকর্মীরা ও খুব আনন্দিত হল। আমরা সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এর দায়িত্ববোধ এর খুব প্রশংসা করলাম। অবশেষে আমরা সবাই ঘুমাতে গেলাম এবং আল্লাহর কাছে শুকরিয় আদায় করলাম অনেক বাধা বিপত্তি পেড়িয়ে যে আমরা সুস্থভাবে সিঙ্গাপুরে এসে পৌছেছি। ঘুমানোর আগে আমি একটু স্মরন করলাম আজকে দিনে ঘটে যাওয়া আমার সাথে বিশেষ দিক গুলো। ভাবলাম এটা একটা বিশাল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। বিশেষ করে বিপদে ধৈর্য্য না হারানো, স্বাভাবিক থাকা, প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজ পত্রাদি সাথে এক কপি করে রাখা।
পরের দিন ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে হোটেলের লবিতে গিয়ে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাষ্ট শেষ করি। সিঙ্গাপুরের খাবার দাবার আমার বেশ ভালো লেগেছে। সকালের নাস্তা শেষ করে আমরা আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কাজ সিঙ্গাপুরের অবস্থিত বাংলাদেশের হাই কমিশন এর সাথে বৈঠক এর উদ্দ্যেশে কেপেল রোড, জিট পো বিল্ডিং যাত্রা শুরু করি। যাত্রাপথে দেখছি সুন্দর রাস্তা ঘাট, দারুন স্থাপনা। দেখছি আর মন জুড়িয়ে যাচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটা শহর। কোন হর্ন এর শব্দ নেই, ভীড় নেই। যাত্রিরা লাইনে দাড়িয়ে বাসে উঠছে। (ছবি) লাইন ঠিক করার জন্য কোন লোক নেই। কারন কেউই লাইন ভাংছে না। নিয়মের প্রতি কি শ্রদ্ধাবোধ। আমার শুধু মুদ্ধতা বেড়েই চলছে সিঙ্গাপুরের মানুষের প্রতি। প্রায়ই বিশ মিনিটে আমরা পৌছে গেলাম বাংলাদেশ হাই কমিশন অফিসে। সেখানে আমরা সিঙ্গাপুরের অবস্থিত বাংলাদেশী শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থা ও করনীয় দিক সর্ম্পকে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা করলাম। আলোচনায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক উঠে এল, যা পরবর্তীতে রির্পোট লেখার ভাল খোরাক জোগায়। আমাদের এই দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা অংশগ্রহন করেছিলেন লেবার কাউন্সিলর ও ফাস্ট সেক্রেটারী বাংলাদেশ হাই কমিশন, সিঙ্গাপুর ।
আমরা তাদের আতিথিয়তা ও সহযোগিতায় মুগ্ধ হয়েছি। দিন শেষে আমরা সিঙ্গাপুরের অবস্থিত একটি স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টি ডব্লিউ সি টু সাথে এক জ্ঞান বিনিময় সভার অংশগ্রহন করি। টি ডব্লিউ সি টু এর অফিসটি বিছ রোড, গোল্ডেন মাইল কমপ্লেক্রা এ অবস্থিত। এই জ্ঞান বিনিময় সভায় আমরা টি ডব্লিউ সি টু শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কি কি কাজ করছে তা জানতে পারলাম, পাশাপাশি আমরা যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছি আমরা কি কাজ করছি ও আমাদের ভিজিটের উদ্দ্যেশে সর্ম্পকে জানাতে পারলাম। এই সভায় আমরা বেশ কিছু বাংলাদেশী শ্রমিকদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছিলাম ।
সভা শেষে আমরা পাশে অবস্থিত ইন্ডিয়ান মার্কেট থেকে প্রয়োজনীয় শপিং করলাম। এখানে একটি কথা না বললে নয় সিঙ্গাপুরে ইন্ডিয়ানদের ভালো অবস্থান রয়েছে বিশেষ করে তামিলদের। এমনকি সিঙ্গাপুরে গণপরিবহনে তিনটি ভাষায় ঘোষণা দেওয়া হয় তার মধ্যে একটি তামিল ভাষা। সারাদিন অফিসিয়াল কাজ শেষে আমরা হোটেলে ফিরে যাই এবং ফ্রেশ হয়ে রাতে আমরা বাংলাদেশী খাবারের উদ্দ্যেশে বাহির হই। পরবর্তীতে আমরা মোস্তফা সেন্টারের নিকট একটি বাংলাদেশী খাবার হোটেলের সন্ধান পাই, সেখানে আমরা প্রায়ই তিন দিন পরে বাংলাদেশী খাবার ভাত, ভর্তা, ডাল, মাছ ও সবজি দিয়ে পেট ভরে খাই।
তারপরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ আমরা পূর্বনির্ধারিত বৈঠক সিঙ্গাপুরের রিক্রুটার, পিপলস ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এর সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহন করি ।
বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়, হিল্টন গার্ডেন ইন, বিলিয়স রোডে। এই বৈঠকে সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশী শ্রমিকদের যোগ্যতা, বিশ^স্ততা বিষয়টি উঠে আসে। পাশাপাশি শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও শ্রম অভিবাসন ব্যবস্থার ডিজিটালকরণে সিঙ্গাপুর সরকারের পদক্ষেপ এর বিষয়টি আলোচনা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পিপলস ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বৈঠক পরবর্তীতে আমরা সিঙ্গাপুরের রিক্রুটিং এজেন্সি এর সভাপতির সাথে এক লাঞ্চ বৈঠকে অংশগ্রহন করি। বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় কালিশ পরবত রেষ্টুরেন্ট, বিলিয়স রোডে । এই বৈঠকে আলোচনা হয় কিভাবে সিঙ্গাপুরের মহিলা শ্রমিক পাঠানো যেতে পারে। একইভাবে সিঙ্গাপুরের বাইরে আর কোথায় বাংলাদেশী মহিলা শ্রমিক পাঠানো যেতে পারে।
এই আলোচনায় উঠে আসে হংকং এর নাম। বৈঠক শেষে আমরা বিকেলে অচার্ড এ বিলাসবহুল বহুতল বিপণণ মার্কেট দেখতে যাই (ছবি) । সিঙ্গাপুরের অচার্ড পয়েন্ট এমন এক স্থান যেখানে বিশে^র সমস্ত নাম করা ব্যান্ডের আউটলেট রয়েছে। অচার্ড এর মার্কেটে আমদের এক মজার কাহিনী রয়েছে। আমার এক সিনিয়র কলিগ অচার্ড এর প্যারাগণ মার্কেটে প্রবেশ করে ওখানে GUCCI আউটলেটে একটি পার্টস পছন্দ করে পরবর্তিতে দাম জিজ্ঞাসা করলে যার মূল্য বলা হয় ৪৮০০ ডলার যার বাংলাদেশী টাকায় মূল্য ৩১২,০০০ টাকা। পরবর্তীতে অচার্ড এর মার্কেট সর্ম্পকে আমাদের এক ভাল ধারনা হয়। আমরা অচার্ড এর মার্কেট গুলোর বাহ্যিক অবয়ব ও সৌর্ন্দয্য অবগাহন ও অবলোকন করে সিটি বাসে করে আমাদের হোটেলে ফিরে আসি। তবে অচার্ড এর মার্কেট থেকে একেবারে কিছু না ক্রয় করে ফিরিনি আমার সাধ্যের মধ্যে ১৫ ডলার দিয়ে একটি টর্চ লাইট ও আমার মেয়ে ফাইযার জন্য বেলুন ক্রয় করি। অচার্ড থেকে ফেরার পথে সিঙ্গাপুরের সিটি বাসে চলার বিচিত্র অভিজ্ঞতা অর্জন করি।
সিঙ্গাপুরের সিটি বাসে চলতে গেলে কার্ড অথবা কয়েন লাগে আর একেক বাস একেক রোডে চলে তার জন্য রোড নম্বর জানতে হয়। সিঙ্গাপুরে প্রত্যেক বাস স্টপেজে বাস চলাচলের লে-আউট, ভাড়ার তালিকা ও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া আছে। আমরা অল্প কিছু সময়ের মধ্যে হোটেলে ফিরে আসি। এই দিন রাতে আমরা সিঙ্গাপুর শহর দেখার জন্য বাহির হয়। হোটেল থেকে প্রায় ২০ মিনিটের মধ্যে আমরা বে-ফ্রন্ট ভিউ তে অবস্থিত মেরিনা বে সেন্ডস এ যাই । সেখানে আমরা ফায়ার ওয়ার্কস দেখতে পাই। সিঙ্গাপুরের রাত মানেই রঙীন আলো আর অনিন্দ্য সৌন্দর্য । উচুঁ উচুঁ বিল্ডিং গুলো মনে হয় কাচঁ আর লাইট দিয়ে তৈরী। প্রায়ই ঘন্টা খানেক মেরিনা বে সেন্ডস এ থেকে সিঙ্গাপুরের রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করে হোটেলে ফিরি।
২৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ প্রতিদিন সকালের মত ভোরে উঠে, হোটেলের ৭ম তলায় অবস্থিত সুইমিং কমপ্লেক্রা ও ব্যায়ামাগারে যাই। সেখান থেকে সিঙ্গাপুরের সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করি। স্কুলগামি স্কুল বাসগুলো সারি সারি লাইন দেখতে পেলাম (ছবি) । অফিসগামি মানুষের চাঞ্চল্যতা চোখে পড়ল। শ্রমিকদের কাজে যোগদানের মূর্হুত চোখে পড়ল। তবে সবকিছুই যেন একটা অদৃশ্য শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে হচ্ছে। কোথায় কোন গাড়ি হরণ বাজাছে না, বা পাবলিক পরিবহনের নেই একে অপরকে ওভারটেক করার প্রবণতা। পুলিশ/নিরাপক্তা বাহিনী বা ট্রাফিক পুলিশের তেমন উপস্থিতি চোখে পড়ছে না। গাড়িগুলো সিগন্যাল লাইট দেখে গাড়ি চাড়ছে আবার সিগন্যাল লাইট দেখে থামছে। জেব্রা ক্রসিং পথচারি না থাকলেও গাড়ি থেমে যাচ্ছে। এ যেন সফর্টওয়্যারে সেট করা অটোমেশন, সবকিছুই যেন একটা অদৃশ্য শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এ মসস্ত দৃশ্য অবলোকন করে মনে মনে আমাদের দেশের সাথে তুলনা করলাম। কবে আমরা সিঙ্গাপুরের সমমনা হব, অথচ সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের জন্ম সম সাময়িক।
২৫ ফেব্রুয়ারী এই দিনটি মূলত আমরা রেখেছিলাম সিঙ্গাপুরের দর্শনীয় স্থান সমূহ দেখার জন্য। সকালে নাস্তা শেষ করে আমরা বেরিয়ে পড়লাম সিঙ্গাপুরের দর্শনীয় স্থান দেখার জন্য। তার জন্য আমরা পরিকল্পনা করি যাতায়তের মাধ্যম হিসেবে পাতাল ট্রেন। সিঙ্গাপুরে ট্যাক্সি ক্যাবগুলোতে ভাড়া অনেক বেশি। কম ভাড়ায় পাতাল ট্রেনে অনেক জায়গায় ভ্রমন করা যায়। প্রথমে আমরা ঠিক করি ইউনিভার্সাল স্টুডিও যাবার জন্য। ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে দেখলাম আমাদের হোটেলে আশে পাশে কোন স্টেশনটি অবস্থিত। সার্চ এ খুজে বের করলাম নোভেনা রেল স্টেশনটি আমাদের কাছে অবস্থিত। তাই আমরা সকালে প্রায়ই আধা ঘন্টা পায়ে হেটে এবং পথচারীদের জিজ্ঞাসা করে নোভেনা রেল স্টেশনে পৌছে গেলাম। সিঙ্গাপুরে রেল স্টেশনগুলো ফেয়ারার পার্ক নামে পরিচিত। সিঙ্গাপুরের প্রত্যেক রেল স্টেশন মাটি থেকে প্রায়ই ২০০-৩০০ মিটার গভীরে অবস্থিত। প্রত্যেক রেল স্টেশন এর উপরে বৃহৎ বৃহৎ শপিং মল গুলো অবস্থিত (ছবি) ।
এখানকার শহর পরিকল্পনাবিদ সিঙ্গাপুরকে এমনভাবে প্লানিং করেছেন যাতে রেল স্টেশন এর যাত্রিরা যাত্রা শেষে প্রয়োজনীয় মাকেটিং এর কাজ শেষ করতে পারেন। রেল স্টেশনে এসে দেখলাম মাটির নিছে সিঙ্গাপুরের আরেক শহর। মাটির নিছে প্রায়ই তিনটি লিয়ারে ট্রেন চলাচল করে। ট্রেন চড়তে এসে বিপাকে পড়লাম, সবকিছু এখানে অটোমেশন। নগদ টাকা দিয়ে ট্রেন ভ্রমন করার সুযোগ একেবারে নেই। ট্রেনে ভ্রমন করতে হলে স্মার্ট কার্ড লাগে, যা কিনা বুথ থেকে টাকার বিনিময়ে স্মার্ট কার্ড নিতে হয়। আমরা প্রথমে বুথের বাইরে দাড়িয়ে সব কিছু লক্ষ্য করছিলাম। কিছুক্ষণ পড়ে সাহস করে কার্ড এর জন্য লাইনে দাড়ালাম এবং মনে মনে একজন সাহায্যকারী খুজছিলাম। ভাগ্যবশত আমাদের পাশে ১২-১৫ বছর বয়সী একজন বালক দেখতে পেলাম। সাহস করে বালক এর সাথে পরিচয় হলাম এবং ট্রেনের কার্ড কিনতে বালকটির সহযোগিতা চাইলাম। সে বিনয়ের সাথে রাজি হয়ে গেল এবং আমাদের দেখাল কিভাবে ট্রেনে ভ্রমনের কার্ড কিনতে হয়। আমরাও বিষয়টি ভালভাবে লক্ষ্য করলাম। পরবর্তীতে আমরা নিজেরাই ট্রেনে ভ্রমনের কার্ড ক্রয় করেছিলাম। এই ভ্রমন কার্ডগুলো কিন্তু রিফিল করা যায়।
নোভেনা থেকে আমরা প্লান করলাম হারভার পয়েন্ট যাব সেখান থেকে সেন্টোসা আইল্যান্ড যাব। নোভেনা থেকে সরাসরি কোন ট্রেন নেই হারভার পয়েন্ট যাবার। আমরা যাত্রার সুবিধার্থে অন্য যাত্রিদের জিজ্ঞাসা কলরাম কিভাবে সেন্টোসা আইল্যান্ডে যেতে হয়। যাত্রি বললেন, হারভার পয়েন্ট যেতে হলে প্রথমে আমাদের ডুবি ঘট নামতে হবে। ডুবি ঘট থেকে আরেক ট্রেনে করে হারভার পয়েন্ট যেতে হয়। পরামর্শক্রমে আমরা ট্রেনে করে নোভেনা থেকে ডুবি ঘট এর উদ্দ্যেশে প্রথমবারের মত পাতাল ট্রেনে চললাম। এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা, ট্রেনের কার্ড রেল প্লাটফর্মের নিকট ইলেকট্রনিক ডিভাইসে স্কেন করা মাত্রই রেল প্লাটফরমে প্রবেশের জন্য গেইট খুলে গেল এবং একটি বার্তা দিল যে আমার কার্ডে আর কত টাকা রয়েছে। প্রতি দুই থেকে পাচঁ মিনিটের মধ্যে ট্রেন আসছে আমরা অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আমদের নির্ধারিত ট্রেনে ছড়লাম। প্রতিটি ট্রেনে খুব ভিড়, যাত্রিরা দাড়িয়ে, বসে ভ্রমন করছে (ছবি) । প্রতিটি ট্রেনে তিনটি ভাসায় ঘোষণা দিচ্ছে একটি ইংরেজী, একটি তামিল ভাষা অন্যটি সিঙ্গাপুরিয়ান ভাষা। এবং প্রত্যেক ট্রেনে রুটের লে আউট এর ডিসপ্লে রয়েছে এবং কোন স্টেশন এর পর কোন স্টেশন তা প্রতিনিয়ত আপডেট দিচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটক এর জন্য কোন স্থানটিতে কি কি বিশেষ দর্শনীয় স্থান, মার্কেট রয়েছে তার বর্ণনা দিচ্ছে, যা পর্যটকদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ও আর্কষণীয়। আমরা প্রায়ই পনের মিনিটের মধ্যে ডুবি ঘট চলে আসলাম। সেখান থেকে আমরা আরেক ট্রেনে করে হারভার পয়েন্টে আসলাম। হারভার পয়েন্ট সিঙ্গাপুরের একেবারে দক্ষিণের অংশ। হারভার পয়েন্টে আসতে আমাদের মোট সময় লেগেছে প্রায়ই ৩৫-৪০ মিনিটি। তারপর আমরা হারভার পয়েন্ট থেকে পায়ে হেটে সেন্টোসা আইল্যান্ড এর পথে রওনা হলাম। প্রায়ই আধা ঘন্টা হেটে আমরা সেন্টোসা আইল্যান্ডে পৌছলাম।
নোভেনা থেকে আমরা প্লান করলাম হারভার পয়েন্ট যাব সেখান থেকে সেন্টোসা আইল্যান্ড যাব। নোভেনা থেকে সরাসরি কোন ট্রেন নেই হারভার পয়েন্ট যাবার। আমরা যাত্রার সুবিধার্থে অন্য যাত্রিদের জিজ্ঞাসা কলরাম কিভাবে সেন্টোসা আইল্যান্ডে যেতে হয়। যাত্রি বললেন, হারভার পয়েন্ট যেতে হলে প্রথমে আমাদের ডুবি ঘট নামতে হবে। ডুবি ঘট থেকে আরেক ট্রেনে করে হারভার পয়েন্ট যেতে হয়। পরামর্শক্রমে আমরা ট্রেনে করে নোভেনা থেকে ডুবি ঘট এর উদ্দ্যেশে প্রথমবারের মত পাতাল ট্রেনে চললাম। এই বিচিত্র অভিজ্ঞতা, ট্রেনের কার্ড রেল প্লাটফর্মের নিকট ইলেকট্রনিক ডিভাইসে স্কেন করা মাত্রই রেল প্লাটফরমে প্রবেশের জন্য গেইট খুলে গেল এবং একটি বার্তা দিল যে আমার কার্ডে আর কত টাকা রয়েছে। প্রতি দুই থেকে পাচঁ মিনিটের মধ্যে ট্রেন আসছে আমরা অল্প কিছু সময়ের মধ্যে আমদের নির্ধারিত ট্রেনে ছড়লাম। প্রতিটি ট্রেনে খুব ভিড়, যাত্রিরা দাড়িয়ে, বসে ভ্রমন করছে (ছবি) । প্রতিটি ট্রেনে তিনটি ভাসায় ঘোষণা দিচ্ছে একটি ইংরেজী, একটি তামিল ভাষা অন্যটি সিঙ্গাপুরিয়ান ভাষা। এবং প্রত্যেক ট্রেনে রুটের লে আউট এর ডিসপ্লে রয়েছে এবং কোন স্টেশন এর পর কোন স্টেশন তা প্রতিনিয়ত আপডেট দিচ্ছে। পাশাপাশি পর্যটক এর জন্য কোন স্থানটিতে কি কি বিশেষ দর্শনীয় স্থান, মার্কেট রয়েছে তার বর্ণনা দিচ্ছে, যা পর্যটকদের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ ও আর্কষণীয়। আমরা প্রায়ই পনের মিনিটের মধ্যে ডুবি ঘট চলে আসলাম। সেখান থেকে আমরা আরেক ট্রেনে করে হারভার পয়েন্টে আসলাম। হারভার পয়েন্ট সিঙ্গাপুরের একেবারে দক্ষিণের অংশ। হারভার পয়েন্টে আসতে আমাদের মোট সময় লেগেছে প্রায়ই ৩৫-৪০ মিনিটি। তারপর আমরা হারভার পয়েন্ট থেকে পায়ে হেটে সেন্টোসা আইল্যান্ড এর পথে রওনা হলাম। প্রায়ই আধা ঘন্টা হেটে আমরা সেন্টোসা আইল্যান্ডে পৌছলাম।
সেন্টোসা আইল্যান্ডটি সিঙ্গাপুরের মুল ভূ-খন্ড থেকে বিচিছন্ন। এটি সিঙ্গাপুরের সাথে একটি সংযোগ সড়ক ও সাসপেনশন ব্রিজ এর মাধ্যমে কানেকটিং হয়েছে, যার সৌন্দর্য অপূর্ব ও নান্দনিক (ছবি) । সেন্টোসা আইল্যান্ড এর মূল আর্কষণ হল ইউনিভার্সাল স্টুডিও ও সী একুরিয়াম। সিঙ্গাপুরের ইউনিভার্সাল স্টুডিও অনেকটা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সাল স্টুডিও এর আদলে গড়ে উঠেছে। এখানে আসার পর মনে হল যেন কোন এক কল্পনার রাজ্যে চলে এসেছি (ছবি) । এখানে রয়েছে বিভিন্ন সেকশন যেমন হলিউড,সাই ফাই,জুরাসিক পার্ক, মাদাগাস্কার ইত্যাদি। এছাড়াও অনেক সিনেমার চরিত্র যেমন চার্লি চ্যাপলিন, মেরেলিন মুনরো প্রমুখদের সাথে ছবি তোলার সুযোগ। এই ইউনিভার্সাল স্টুডিও তে প্রবেশ মূল্য প্রায়ই ১০০ ডলার। ইউনিভার্সাল স্টুডিও সৌন্দর্য উপভোগ করে আমরা স্কাই ট্রেনে করে আবার হারভার পয়েন্টে চলে আসলাম।
রাফেলস প্লেসের স্থাপনাগুলো দেখতে দেখতে হেটে আমরা মারচেন্ট নদীর (সিঙ্গাপুর নদী) তীরে চলে আসি। এই নদীর তীরটি ঐতিহাসিকভাবে প্রসিদ্ধ। এই নদীর উপরে ঐতিহাসিক ক্যাভেনাগহ ব্রীজ রয়েছে যা ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশ কর্তৃক তৈরী। ব্রীজটির স্থাপত্য কৌশল খুবই নান্দনিক এবং এটি ১৮৭০ সালে ব্যবহারের জন্য উমুক্ত করে দেওয়া হয়।। ব্রীজটির মুখে ঐতিহাসিক ফুলারটন হোটেলটি অবস্থিত। ফুলারটন হোটেলের স্থাপত্য নকশা খুবই আকর্ষনীয় ও নান্দনিক ।
এটি সিঙ্গাপুরের মূল আর্কষণ। এটাকে সিঙ্গাপুরের প্রতীক ধরা হয়। এটি পৃথিবীর সকল দর্শনার্থীদের স্বাগত জানায়। আমরা অনেকক্ষণ ধরে এর সৌন্দর্য উপভোগ করলাম। এর পাশেই রয়েছে নৌকা করে নদী ভ্রমনের সুযোগ। সারাদিন আমরা সিঙ্গাপুরের দর্শনীয় স্থানসমূহ অবলোকন করে আমরা হোটেলে ফিরে গেলাম। পরবর্তীতে ফ্রেশ হয়ে সন্ধ্যায় আমরা স্থানীয় একটি বাংলাদেশী পত্রিকার সম্পাদকের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করি। এই সাক্ষাৎে আমরা সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশী শ্রমিকদের অবস্থা জানতে চাই। সম্পাদক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে আমাদেরকে সহযোগিতা করেছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশী শ্রমিকদের পরিবেশনায় এক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করি । আর ঐ দিনটি রোববার থাকায় বেশ সংখ্যক বাংলাদেশীর সাথে পরিচয় হয়। আর মূলত রোববার সিঙ্গাপুরের সাপ্তাহিক বন্ধের দিন। সিঙ্গাপুরের অবস্থিত বাংলাদেশীরা রোববারে মোস্তফা সেন্টারের পাশে ও লিটল ইন্ডিয়া বেশ জড়ো হয়।
সিঙ্গাপুরে শপিং এ বেশ বড় বড় ও পৃথিবী খ্যাত শপিং মল আছে যেমন সিটি স্কোয়ার মল, মারিনা বে স্যান্ডস মল, অচার্ড পয়েন্ট এর মার্কেটগুলো। তবে কম খরছ ও সাধ্বের মধ্যে কেনা কাটার জন্য লিটল ইন্ডিয়া ও মোস্তফা সেন্টারের মার্কেটগুলো বেশ জনপ্রিয়। আমি কেনা কাটায় তেমন আগ্রহী ছিলাম না, তবে প্রয়োজনীয় কিছু কেনা কাটা বিশেষ করে সুভিনিয়র ধরনের জিনিস লিটল ইন্ডিয়া ও মোস্তফা সেন্টারের মার্কেটগুলো থেকে ক্রয় করেছিলাম।
এভাবে চারটি দিন ব্যস্ততা,কাজের ও বেড়ানোর মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছি সময় হল দেশে ফেরার। আমাদের ফিরতি ফ্লাইট ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ বেলা তিনটায় বাংলাদেশী বিমানের ফ্লাইটে। ২৬ ফেব্রুয়ারী সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করি ও ব্যাগ, লাগেজ ঘুছিয়ে নেই। বেলা ১১ টার দিকে আমরা হোটেলে রুম চেক আউট করি। টেকি্রা ক্যাবে করি চাংগি এয়ারপোর্ট উদ্দেশ্য রওনা দেই। চলার পথে মনে হচ্ছিল পুরো রাস্তাটাকেই যেন সাবান দিয়ে কে যেন ধুয়ে রেখেছে। সিঙ্গাপুরের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ঞ, প্রতিদিনের বৃষ্টি শহরের সব ধূলা ময়লা পরিস্কার করে দেয়। রাস্তার দু’ধারে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের বিশাল বিশাল ভবন আর তার আঙিনার শোভাবর্ধণকারী গাছ-গাছালি লতা-গুল্ম পাতাবাহারসমূহ অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর । কোনটি ছেড়ে কোনটি দেখব! বিস্ময়ে অপলক চোখে চেয়ে থাকলাম সেদিকে। প্রায়ই চল্লিশ মিনিটের মধ্যে আমরা সিঙ্গাপুরের একমাত্র ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট চাংগি এয়ারপোর্ট পৌছলাম।
এভাবে চারটি দিন ব্যস্ততা,কাজের ও বেড়ানোর মধ্যে কাটিয়ে দিয়েছি সময় হল দেশে ফেরার। আমাদের ফিরতি ফ্লাইট ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ বেলা তিনটায় বাংলাদেশী বিমানের ফ্লাইটে। ২৬ ফেব্রুয়ারী সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করি ও ব্যাগ, লাগেজ ঘুছিয়ে নেই। বেলা ১১ টার দিকে আমরা হোটেলে রুম চেক আউট করি। টেকি্রা ক্যাবে করি চাংগি এয়ারপোর্ট উদ্দেশ্য রওনা দেই। চলার পথে মনে হচ্ছিল পুরো রাস্তাটাকেই যেন সাবান দিয়ে কে যেন ধুয়ে রেখেছে। সিঙ্গাপুরের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ঞ, প্রতিদিনের বৃষ্টি শহরের সব ধূলা ময়লা পরিস্কার করে দেয়। রাস্তার দু’ধারে সারি সারি দাঁড়িয়ে থাকা আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের বিশাল বিশাল ভবন আর তার আঙিনার শোভাবর্ধণকারী গাছ-গাছালি লতা-গুল্ম পাতাবাহারসমূহ অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর । কোনটি ছেড়ে কোনটি দেখব! বিস্ময়ে অপলক চোখে চেয়ে থাকলাম সেদিকে। প্রায়ই চল্লিশ মিনিটের মধ্যে আমরা সিঙ্গাপুরের একমাত্র ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট চাংগি এয়ারপোর্ট পৌছলাম।
এয়ারলাইন্স এর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে সিঙ্গাপুরের ইমিগ্রেশন ক্রস করলাম। এবং বিমানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। নির্ধারিত সময়ে বাংলাদেশের বিমান সিঙ্গাপুরের সীমানে ছেড়ে প্রায়ই ৩.৩০ ঘন্টায় প্রায় ৩০০০ কি.মি পথ পাড়ি দিয়ে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে অবতরণ করল। আমরা সবাই সুস্থ শরীর, মন ও ভাল কিছু স্মৃতি নিয়ে সুইট হোমে ফিরে গেলাম।
সারকথায়, সিঙ্গাপুর হলো পৃথিবীর সপ্তম ব্যয়বহুল দেশ। এইবার বুঝেন কি পরিমান খরচ! ১০০ ডলারের নিচে কোন হোটেল পাওয়া যায়না বললেই চলে। তবে এ দেশের আয়তন খ্বু অল্প। ২ ঘন্টায়ই দেশের এ প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারবেন কারন এ দেশের যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ উন্নত। যে কোন একটা যায়গায় হোটেল নিয়েই চলে কারন আপনি যেখানেই ঘুরেন না কেনো, আপনি আবার খুব সহজেই এই হোটেলে এসে থাকতে পারবেন। তারা খুবই ভদ্র একটি জাতি। নিয়মের বাহিরে কিছুই করে না। আপনি ১০০ ভাগ নিরাপদভাবে যে কোন অলিগলিতে হেটে বেড়াতে পারবেন। ছিনতাই হওয়ার কোন প্রকার সম্ভাবনা নেই। এভারেজে আপনাকে প্রতিদিনের জন্য ২০০ ডলার খরচ করতে হতে পারে যদি আপনি আমার মতো করে খরচ করতে অভ্যস্ত হন আরকি! তবে, দেশটির আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা অনেক উন্নত এবং বেশ কড়া। তাই চেষ্টা করবেন যেখানে সেখানে আবর্জনা আর থুথু না ফেলতে। অন্যথায় অনেক বেশী জরিমানা গুনতে হতে পারে। তবে মিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী শ্রমিকদের অবস্থা মিশ্র কেউ ভাল আছে কেউ ভাল নেই। অভিযোগ রয়েছে রিক্রুটাররা কারণ ছাড়া চাকুরী থেকে অব্যহতি, বিনা নোটিশে চাকুরী থেকে অপসারন, কম মুজরী ইত্যাদি | বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশীরা বাংলাদেশীর ক্ষতির কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। তবে দক্ষ হয়ে গেলে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশী শ্রমিকদের সম্ভাবনা বেশ উজজ¦ল।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন