আইন বা নীতিমালা তৈরী ও প্রণয়ন করে অনেক সমস্যা সমাধান করা যায়। কিন্তু কিছু বিষয় রয়েছে যা আইন বা নীতিমালা তৈরী করেও সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। যার জন্য প্রয়োজন রয়েছে ব্যক্তি সচেতনতা ও সামাজিক উদ্যোগ। তেমনি একটি বিষয় হল সড়ক দুর্ঘটনা। গত কয়েক বছর ধরে সড়ক দুর্ঘটনা বাংলাদেশে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পাশাপাশি বেড়েছে বিকলাঙ্গের সংখ্যা, যা মৃত্যুও চেয়ে ভয়ানক। গত পাঁচ বছরে সড়ক দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যুর সংখ্যা প্রায়ই বিশ হাজার ও জখম হয়েছেন ১৫০০০।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে যে কয়টি বিষয়কে দায়ী করা হচ্ছে সেটি হলো অপরিকল্পিত নগরায়ণ, মোটরযানের উচ্চ প্রবৃদ্ধি ও সচেতনতার অভাব। গবেষণায় দেখা যায় বাংলাদেশের নগরায়ণের হার ৪% এবং মোটরযান বৃদ্ধির হার ৮%, ফলস্বরুপ সড়ক গুলোতে ট্রাফিক জ্যাম, রাস্তার কাঠামোগত অবনতি এক প্রকট আকার ধারন করেছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জন সচেতনতার অভাব। সম্প্রতি রাস্তায় খুবই চোখে পড়ে, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়া, কানে ইয়ার ফোন বা ব্লু-টোথ লাগিয়ে ব্যস্ত সড়ক বা রেল পথে হাটা ও পার হওয়া তারপর সড়ক দুর্ঘটনার পতিত হওয়া। আপনি যে কোন দিন যে কোন সময় আপনার এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মোড়কের পাশে কিছুক্ষণ দাড়াঁন। তারপর চোখে পড়বে সেই সব দৃশ্য, ট্রাফিক সিগন্যাল তোয়াক্বা না করে ব্যস্ত সড়ক পার হচ্ছেন এবং কানে মোবাইল ফোনে কথা বলে রাস্তা পরাপার। এবং অনেকক্ষেত্রে নিজেই ট্রাফিক পুলিশের ভূমিকায় রাস্তার পারাপার হচ্ছে যেমন একটি হাত তুলে চলন্ত সড়ক পার হচ্ছেন, ওভার ব্রীজ ব্যবহারের বদলে রাস্তার মধ্যে দিয়ে হেটে ঝুকিঁপূর্ণ ভাবে রাস্তা পার হচ্ছে। মহাসড়কে দেখা যায় রেইস প্রতিযোগিতা কার আগে কে গন্তব্য স্থলে পৌছবে। আর এই সব পরিস্থিতেতে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা ও ঝড়ছে মূল্যবান প্রাণ। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র ওবায়দুল্লাহর কথা। অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় সেমিষ্টারের ছাত্র ২০১৬ সালের ২০ই মে কমলাপুরগামী ট্রেনের নীচে কাটা পড়ে মারা যান তিনি, যার হাতে ছিল আইসক্রিম আর কানে ছিল মুঠোফোন। আবার গাড়ি চালানো অবস্থায় চালকের মুঠোফোনে কথা বলা খুব দৃশ্যমান। যদিও গাড়ির ভিতর লেখা থাকে চলন্ত অবস্থায় চালকের সহিত কথা বলবেননা। আর চালক সাহেব ফোনে কথা বলতে বলতে গাড়ির স্টেয়ারিং ঘোরাচ্ছেন, ক্লাচ-ব্রেক নিয়ন্ত্রন করছেন। কিন্তু ২০০৭ সালে মোটরযান আইনে আছে কোনো চালক গাড়ি চালনা অবস্থায় মুঠোফোনে কথা বললে ৫০০ টাকা জরিমানা ও জেল দন্ড দেওয়া যাবে। কিন্ত এই ধরনের আইনের প্রয়োগের খবর তেমন একটা চোখে পড়েনা।
প্রত্যেকটা জীবন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও মুল্যবান। নিজের জন্য না হোক, প্রিয়জন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র কথা চিন্তা করে আমাদের সবাইকে সুস্থ হয়ে বাচঁতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনা থেকে আমাদের মুল্যবান জীবনকে রক্ষা করতে হবে। সেইজন্য আমাদেরকে সচেতন হতে হবে, সড়ক নিরাপত্তা প্রতীক ও ব্যবহারের জ্ঞান সবাইকে জানতে হবে ও জানাতে হবে। পাঠ্য-পুস্তকে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়গুলো অর্ন্তভূক্ত করতে হবে। প্রতিযোগিতা মূলক ভাবে গাড়ি চালানো পরিহার করতে হবে এবং এই ব্যাপারে চালক ও যাত্রীকে সচেতন হতে হবে। মহাসড়কের সমস্ত ব্ল্যাক স্পটগুলো চিহ্নিত করে তা নিরসনে ট্রিটমেন্ট করতে হবে। প্রকৃত লাইসেন্স ধারী দের দিয়ে গাড়ি চালনা করতে হবে এবং এই ব্যাপারে গাড়ি চালক ও সহকারীদের জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার আয়োজন করতে হবে। রাস্তার বাঁেক, মোড়ে ও চৌরাস্তায় গাড়ি দাড়করিয়ে যাত্রি উঠা ও নামানো একে বারে বন্ধ করতে হবে। নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি দাড়করিয়ে যাত্রি উঠা ও নামানো করতে হবে। বর্ষা মৌসুমে কথা চিন্তা করে সড়ক তৈরীর উপকরনে পরিবর্তন আনতে হবে এবং এই সময় রাস্তা দূত মেরামত করতে হবে। যাতে বর্ষায় রাস্তার যে ক্ষতি ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে তা অনেকাংশে কমিয়ে আনা যায়। শীতকালের কথা চিস্তা করে মহা সড়কে লাইটিং এর ব্যবস্থা করা ও যানবাহনে নিয়ন আলোর ব্যবস্থা রাখা।
পরিশেষে বলতে চাই, আইন, নিয়ম নীতি, কাঠামোর সংস্কার করে হয়ত সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা যেতে পারে। তবে ব্যত্তিগত সচেতন ও কিছু বদ অভ্যাসের পরিবর্তন না করলে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে আমাদের স্বার্ভিক অর্জন চেষ্টা ব্যার্থ হবে। তাই আসুন সড়ক দুর্ঘটনা রোধে, মূল্যবান জীবন ও সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে ব্যক্তিগত সচেতনতার পাশাপাশি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন