প্লেনের টিকিট কেটে আমি বেশ উত্তেজিত। ঢাকায় যাচ্ছি! সিট নম্বর ০৪ সি — জানালার পাশে। সূর্যের আলো মুখে পড়ে সিনেমার হিরোর মতো লাগছিল নিজেকে। চমৎকার! জানালার পাশে বসলেই তো দিগন্ত দেখা যায়, আর পাশের সিটে কেউ মজার লোক পড়লে তো কথাই নেই। পরিচয় হবে, গল্প হবে, হয়তো বন্ধুত্ব পর্যন্ত গড়াবে। কিন্তু আমার মন পুরোপুরি স্যাটিসফাইড হচ্ছিল না। কেননা পাশের সিটটা তখনো ফাঁকা। ব্যাগ রেখে আরাম করে বসলাম, মনে মনে ভাবলাম, কে আসবে? হয়তো কোনো প্রবাসী ভাই, না হয় কোনো কর্পোরেট ভদ্র পুরুষ/মহিলা, কিংবা কোনো শিক্ষানবিশ তরুণ/ তরুণী যার সাথে পরিচয় হবে ফেসবুক আইডি, লিংকড-ইনের একাউন্ট পর্যন্ত বিনিময় হয়ে যাবে! আমি আরো ভাবতে লাগলাম, "আহা, যদি পাশের যাত্রীটি হয় কোন ভদ্রলোক গল্প করার মতো, হালকা ঠাণ্ডা স্বভাবের। হয়তো বই পড়েন, কিংবা ট্রাভেল লাভার। নয়তো এমন কেউ, যার সাথে রাজনীতি থেকে শুরু করে আমের চাটনি পর্যন্ত আলোচনা করা যায়!" ভাবনায় ভাবনায় চলে গেলাম আরেক লেভেলে, যদি পাশের সিটে বসে কোন... ?। গল্পে গল্পে বন্ধুত্ব হয়ে যাবে, হঠাৎ নিজেকে থামালাম “এইসব চিন্তা বাদ দাও ভাই, গল্পই হবে না যদি পাশের যাত্রী সাইলেন্ট মোডের হয়।”
এত ভাবনা শেষে ঘড়ির কাঁটা দেখে দেখি, প্লেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে, বিমান ক্রু নিরাপত্তা নির্দেশিকা দেবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক সহযাত্রী প্রিয়জনকে ফোন করে বিমানে অনবোর্ড হবার কথা জানাচ্ছে। আমি মাঝে মাঝে ঘাড় ঘুরিয়ে ০৪ সি’র সম্ভাব্য যাত্রীকে খুঁজছি, কেউ কি এইদিকে আসছে? না, সবাই পাশ কাটিয়ে চলে গেল। প্লেনের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আমার কৌতূহলের বিদ্যুৎ চুপচাপ নিভে গেল। সিটটা তখনো ফাঁকাই রয়ে গেল!