শুক্রবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৪

সফল নেতৃত্বের অন্যতম গুনাবলী আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা

আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ হল দুই বা ততোধিক মানুষের মধ্যে কথা, চিন্তা, ধারণা,অনুভূতি এবং আবেগের বিনিময়। সফল নেতৃত্বের অন্যতম অপরিহার্য গুনাবলী হলো আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা ।  দৃঢ় আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা কর্মক্ষেত্রে সাফল্যের একটি অন্যতম সূচক। আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতা পেশাদার এবং ব্যক্তিগত জীবনের জন্য অত্যন্ত দরকারী। এটি আপনাকে চাকরির ইন্টারভিউ এগিয়ে রাখবে, আপনার কর্মজীবনে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখেবে, সংস্থার বা সাংগঠনিক নেতৃত্বে অতুলনীয় করে রাখে। অন্যদিকে, আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার অভাব সহকর্মীদের বা ব্যবস্থাপনার সাথে ভুল যোগাযোগ বা ভুল বোঝাবুঝির দিকে পরিচালিত করতে পারে, যা আরও উল্লেখযোগ্য দ্বন্দ্বে পরিণত হতে পারে।

সফল যোগাযোগকারীর আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ দক্ষতাসমূহঃ

  • কার্যপোযোগী সম্পর্ক স্থাপন;
  • বিষয় দক্ষতা;
  • কার্যকরি যোগযোগের পরিবেশ তৈরির দক্ষতা;
  • উন্মুক্ত প্রশ্ন করার দক্ষতা;
  • পরিবেশ পরিস্থিতি বোঝার দক্ষতা;
  • শোনা ও সাড়া দেয়ার দক্ষতা;
  • প্রতি উত্তর দক্ষতা;
  • সমঝোতার দক্ষতা;
  • বিচারমূলক শব্দ পরিহারের ও বিনয়ী;
  • পর্যবেক্ষণ করার দক্ষতা;
  • ভুল স্বীকার করা;
  • সারসংক্ষেপ করার দক্ষতা

আন্তঃব্যক্তিক দক্ষতার উদাহরণসমূহঃ
সম্প্রতী, আমরা দেখেছি,মাননীয় প্রধান উপদেষ্ঠা ড. মুহাম্মদ ইউসনূস স্যার রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভায় আলাদা কোন প্রটোকল না নিয়ে ছাত্র ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের সাথে সমান অবস্থানে বসে মতবিনিময় সভায় অংশ নেন ও সফল একটি সভা সম্পন্ন করেন। নিরাপত্তা বা প্রটোকলের কারণে হয়ত, সবসময় উনি এই চর্চা করতে পারবেন না, তবে, যেটি দেখিয়েছেন সেটি আমাদের জন্য অনুকরনীয় । 

মাননীয় প্রধান উপদেষ্ঠা ড. মুহাম্মদ ইউসনূস স্যারে এই মতবিনিময় সভা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি এই মতবিনিময় সভা যেভাবে ছাত্রদের সাথে যেভাবে যোগাযোগ করলেন, তা কার্যক্রর সফল যোগাযোগের অন্যতম উদাহরণ যেমন; সম্পর্ক স্থাপন; মাননীয় উপদেষ্টা প্রথমেই ছাত্র ও অন্যান্য অংশগ্রহণকারীদের সাথে সালাম/শুভেচ্ছ বিনিময় ও কুশল জিজ্ঞাসা করলেন; কার্যক্রর যোগাযোগের পরিবেশ স্থাপন করলেন, যেমন সম-অবস্থানে বসলেন (উল্লেখ্য মাননীয় উপদেষ্টার জন্য আলাদা চেয়ারের থাকলেও উনি এটাতে না বসে, সবাই যে ধরনের চেয়ারে বসেছে, সে ধরনে চেয়ারের ব্যবস্থা করতে বললেন এবং সবার সাথে মিলিয়ে সেই ধরনের চেয়ারে বসলেন), চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বললেন, কথার গুরুত্ব বুঝে যথার্থভাবে স্পর্শ করে কথা বললেন। ধৈর্য ও মনোযোগের সাথে সবার কথা শুনলেন এবং সাড়া দিলেন। বিচামুলক শব্দ পরিহার করে, সারসংক্ষেপের মাধ্যমে সভা শেষ করলেন। 

ঠিক একই ধরনের আরেকটি আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ দক্ষতা দেখাগেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নব নিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. নিয়াজ আহমেদ খান স্যারের মাঝে, ছুটির দিনে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল পরিদর্শন করেছেন। প্রাধ্যক্ষবিহীন (তৎকালীন) এই হলগুলোতে যাওয়ার পর প্রাধ্যক্ষের চেয়ারে তাকে বসতে দেওয়া হলেও তাতে না বসে হাউস টিউটরদের সঙ্গে মিলিয়ে বসেছেন। এই বিনয়ী আচরণের কারণে মুগ্ধ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন বলেন, ‘যার চেয়ার সেখানে তিনিই বসবেন’। এটাই পরিবর্তন। এটাই মুগ্ধতা। এটিও একটি আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগ দক্ষতা সম-অবস্থানে বসা ও অন্য সহকর্মীর মর্যাদাকে স্বিকার করা। 

বিনয় একটি মানবীয় গুণ। আন্তঃব্যক্তিক যোগাযোগের অন্যতম দক্ষতা।  আমরা যখন কাহারও সাথে কথা বলবো বা আচরণ প্রকাশ করবো, তার সেই কথা ও আচরণে কোনো প্রকার ঔদ্ধত্য থাকবে না। মনে রাখতে হবে, ভুল স্বীকার করলে কখনো মানুষের সম্মান হ্রাস পায় না বরং তা বৃদ্ধি পায়। যে মানুষকে সম্মান করে অন্য ব্যক্তিরাও তার আচরণে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে সম্মান করতে চায়। তাই অন্যকে গুরুত্ব দেয়া বিনয়ী অর্জনের ভালো একটি উপায়। যে ব্যক্তি ভদ্র ও বিনয়ী তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে ও অনেক।